অবাক হয়ে সোনাদার দিকে তাকিয়ে থাকে সাম্য। সোনাদা কি কোনও অলৌকিকতার কথা বলছে? এসব তো সোনাদা কোনওদিনই বিশ্বাস করে না। ব্যাপারটা ঠিক কী, বুঝে উঠতে পারছে না সাম্য। মণিবউদির দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে সাম্য জানতে চায়, জিনিসটা কী?
সুকান্ত গঙ্গোপাধ্যায়
সাম্যদের বাড়িতে আজ ফুচকার ফিস্ট। পুদিনা পাতা কিনতে বাজারে এসেছে সাম্য। মেজকা একবার সকালে বাজার ঘুরে গেছে। আজ রোববার। সবজিপাতি, মুরগির মাংস সব পেয়েছে। ফুচকার জন্য কাগজি লেবুও এনেছে, শুধু পুদিনা পাতা পায়নি। বুলবুলিদি রেগে কাঁই। সাম্যকে বলল, তুই খুঁজে নিয়ে আয়। আমাদের বাজারে না পেলে মাকালতলা বাজারে যাবি।
ঘাড় হেলিয়ে সাইকেল নিয়ে বাজারের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল সাম্য। রাস্তার দু’ধারে বাজার বসে। সাম্য সাইকেলের সিট থেকে নেমে পুদিনা পাতার জন্য চিরুনি তল্লাশি চালাচ্ছে।
একান্নবর্তী পরিবার সাম্যদের। প্রত্যেক রবিবার বিকেলে কিছু না কিছু খাবারের ফিস্ট হয়। কোনও রবিবার ঘুগনি, আর এক রবিবার আলুর চপ, কখনও বা মোমো। রবিবার বিকেলে টিউশনি পড়ানো রাখে না সাম্য। লিচুতলার বোসবাড়ির উঠোনে সেদিন বসে জমজমাট আড্ডা।
দাঁড়িয়ে পড়ে সাম্য। ওই তো, ওগুলো পুদিনা পাতা না? এক বুড়ি অন্যান্য শাকের আঁটির সঙ্গে নিয়ে বসে আছে। খুব খেয়াল না করলে চোখে পড়বে না। মেজকার দোষ নেই।
সাইকেল গড়িয়ে বুড়ির সামনে যায় সাম্য। এমন সময় মোবাইল বাজতে থাকে তার। কে আবার এসময় ফোন করছে? জিন্সের পকেট থেকে ফোনসেট বের করল সাম্য। স্ক্রিনে ভেসে উঠেছে মণিবউদির নাম। কী হল আবার! দরকার ছাড়া মণিবউদি ফোন করে না। সাম্য ওদের বাড়িতে নিজে থেকেই যায়। কলটা রিসিভ করে সাম্য। বলে, বলো, কী বলছ?
ওপ্রান্তে খানিক টেনশনের গলায় মণিবউদি বলল, একবার আমাদের বাড়িতে আসতে পারবে?
এখন! কেন হঠাৎ? কী হয়েছে?
জীবনযুদ্ধে পিছিয়ে পড়া মানুষ এভাবেই বোধহয় কাল্পনিক গোলককে আশ্রয় করে জিতে যাওয়ার স্বপ্ন দেখে। নিজের মধ্যে সুপার পাওয়ারের অস্তিত্ব বিশ্বাস করতে থাকে। সুপ্ত থাকা প্রতিবাদেরও মাধ্যম লাগে প্রকাশ পেতে।
বরাবরের মতোই কথাসাহিত্যের জাদুকরের এই অনবদ্য ছোটগল্পে মোহিত হয়ে গেলাম ❣️
মুগ্ধতা ছাড়া ভাষা নেই। ভীষন ভালো একটা গল্প পড়লাম। কতকিছুই যে আছে গল্পটিতে। একজন জাত সাহিত্যিকই পারেন সবকিছুকে এমন সুন্দর করে ধরতে। ভালো থাকুন প্রিয় গল্পকার…
আশ্চর্য গোলক নিয়ে এক এক আশ্চর্য লেখা। অসাধারণ পরিণতি
সোনাদার মতো মানুষদের থাকা উচিত। তাদের জন্যেই তো ওই কথাটা বলা যে “ভালো মানুষ এখন আছে”।
খুব সুন্দর গল্প ।সুকান্ত গঙ্গোপাধ্যায়ের হাত থেকে অনেক পাওয়ার আছে বাংলা সাহিত্যে ।প্রণাম তব শ্রীচরণে।🙏🌼
সুন্দর
আশ্চর্য গোলক রহস্য। পরাজিত হেরে যাওয়া মানুষেরা বোধহয় এমনই মিরাকুলাস কিছু করবার বা ঘটাবার স্বপ্ন দ্যাখে। সে স্বপ্ন অধরাই থেকে যায়। গল্পের নির্মাণ প্রমাণ করে জাত শিল্পী র। সমৃদ্ধ হলাম।
সোনাদার মতো মানুষেরা ক্রমশ এই দুনিয়া থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছেন। যে দু-একজন এখনও রয়েছেন তাঁরাও বোধকরি এই আশ্চর্য গোলকের সন্ধানেই আছেন। খুব ভালো লাগলো গল্পটা।