বা়ংলার প্রথম পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল সাহিত্য পত্রিকা

একটি গেছো গল্প

কোথায় কী গাছ লাগাব, কেন লাগাব? তাতে ভূ-উষ্ণায়ন কমবে না বাড়বে, অক্সিজেন পাব কিনা, সেই গাছ জীববৈচিত্র্যকে ধারণ করতে পারবে কিনা? গাছ লাগানোর আগে এই প্রশ্নগুলো নিয়ে ভাবনাচিন্তাও জরুরি।

অয়ন ঘোষ

“গ্রহটাকে বাঁচানোর জন্য, গাছ লাগাবেন না।” এমনটাই ছিল ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমণ্ডল রসায়নের (atmospheric chemistry) সহকারী অধ্যাপক নাদিনে উঙ্গারের প্রবন্ধের (opinion piece) শিরোনাম। ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪, দ্য নিউইয়র্ক টাইমস (অনলাইন)-এ সেটি প্রকাশিত হয়। পরদিন সেটা ছেপেও বেরোয়। প্রচলিত ধ্যানধারণা ভেঙে চুরমার করে দেবার মতো উপাদান ছিল সেই প্রবন্ধের ছত্রে ছত্রে। রে রে করে তেড়ে এলেন বিজ্ঞানীরা। যেমন, ২৪ সেপ্টেম্বর নেচার পত্রিকার ব্লগে ব্রনসন গ্রিসকম বিশ্লেষণ করে দেখালেন উঙ্গার তাঁর গবেষণায় কী কী ভুল করেছেন। ডন ব্র্যাগের মতো কেউ কেউ অবশ্য উঙ্গারকে সমর্থন করলেন। প্রচলিত ধারণার বিপ্রতীপ চিন্তাভাবনা করেছিলেন বলেই যে উঙ্গারের ওপর এই আক্রমণ তা কিন্তু নয়। তাহলে তিনি জীবননাশের হুমকি পেতেন না। প্রথাভাঙা চিন্তাভাবনা থেকেই তো হয় নতুন আবিষ্কার। আসলে এর প্রায় এক মাস আগে, ২৪ অগাস্ট ২০১৪ তারিখে নেচার পত্রিকায় (অনলাইন) প্রকাশিত একটি গবেষণামূলক পত্রে (research letter) উঙ্গার ভিমরুলের চাকে ঢিল মেরেছিলেন।
শিল্পবিপ্লবের সময় থেকে মানুষের প্রকৃতিকে বদলে দেবার ক্ষমতা এতটাই ভয়াবহভাবে বেড়ে গিয়েছিল যে, তা শুধু প্রকৃতিকে নিজের প্রয়োজনে দুমড়ে-মুচড়ে নতুন রূপ দিল তাই নয়, প্রকৃতির বিপাকক্রিয়াগুলোর গতিশীল ভারসাম্যকে তীব্রভাবে নাড়া দিল। পুঁজির সঞ্চালকরা ব্যাপারটা সম্যক না বুঝলেও, গোলমাল একটা হচ্ছে সেটা টের পেলেন। স্বভাবতই তাঁরা এর সমাধানের দায়িত্ব দিলেন বাজার-অর্থনীতির ওপরে। আর্থার সেসিল পিগু ১৯২০ সালে পিগুভিয়ান ট্যাক্সের ধারণার জন্ম দিলেন। যেসব বাজারি কাণ্ডকারকানা নেগেটিভ এক্সটার্নালিটিসের জন্ম দেবে তাদের ওপর এই ট্যাক্স চাপানো হবে যাতে সেইসব ক্ষতিকর কাণ্ডকারখানার ওপর রাশ টানা যায়। মোদ্দা কথা, প্রকৃতির ক্ষতি করলে তার জন্য বাড়তি ট্যাক্স দিতে হবে। পিগু অবশ্য প্রকৃতির ক্ষতির কথা বলেননি। সেটা পরবর্তী অর্থনীতিবিদদের সংযোজন। পলিউটার পেস প্রিন্সিপল।
যথারীতি ‘বাজার’ এই ব্যবস্থায় হাত এড়ানোর ব্যবস্থা করে নিল। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে যেখানে পিগুভিয়ান ট্যাক্স নেই সেখানে কারাখানাগুলো সরে যেতে লাগল। এই প্রবণতা রোধ করতে ১৯৬০ সালে রোনাল্ড কোসে ধারণাটা উলটে দিলেন। তাঁর প্রস্তাব, সব কোম্পানির প্রকৃতির ক্ষতি করার সীমা বেঁধে দেওয়া হবে, সেই মর্মে তারা লাইসেন্স পাবে। প্রয়োজনে যেসব কোম্পানি প্রকৃতির কম ক্ষতি করে তারা তাদের লাইসেন্স বেচে দিতে পারবে। কিনে নেবে সেইসব কোম্পানি যারা প্রকৃতির ক্ষতি কমাতে অপারগ। ক্যাপ অ্যান্ড ট্রেড।
আইপিসিসি (Intergovernmental Panel on Climate Change), ভূ-উষ্ণায়নের সমাধানে এই মডেলটাই গ্রহণ করল। ভূ-উষ্ণায়নের জন্য দায়ী গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণের সীমা বেঁধে দেওয়া হল। যে সব দেশ, কারখানা বা ব্যবস্থা এই সীমার নীচে থাকল তারা অর্জন করল কার্বন ক্রেডিট। যারা সীমা মানতে পারছে না তারা এই কার্বন ক্রেডিট কিনে নিতে পারে। এটাই কার্বন ট্রেডিং। অর্থাৎ প্রথম বিশ্বের যে দেশ বা কারখানা নিঃসরণ কমাতে পারল না তাদের টাকায় গাছ বসাতে লাগলেন ভারত, ঘানা বা থাইল্যান্ডের মতো দ্বিতীয় বা তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর সাধারণ মানুষ। তাদের উৎসাহ দিতে ও গাছের চারা যোগাতে কাজে লাগল ছোট-বড় নানা এনজিও। পৃথিবী জুড়ে কোটি কোটি গাছ লাগাতে পারলেই ভূ-উষ্ণায়নকে সীমার মধ্যে বেঁধে রাখা যাবে, এইরকম একটা একমাত্রিক সমাধান খাড়া করল আইপিসিসি। সরাসরি নাম উল্লেখ করে এই মডেলটাকেই চ্যালেঞ্জ করেছিলেন উঙ্গার। তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল, ভূ-উষ্ণায়নের ওপর জৈব উৎস থেকে আসা উদ্বায়ী জৈব যৌগগুলোর (BVOC – Biological volatile organic compounds) প্রভাব। তিনি দেখালেন, জঙ্গলের গাছ থেকে যেসব BVOC— যেমন মিথেন, ওজোন, আইসোপ্রিন ইত্যাদি বের হয়, তারাও ভূ-উষ্ণায়নের জন্য দায়ী। বিশেষত আইসোপ্রিন ওজোন তৈরির প্রক্রিয়াকে প্রবলভাবে বাড়িয়ে দেয়। এছাড়া গাঢ় রঙের পাতার আচ্ছাদন সরে গেলে বরফ ও মাটি অনেক বেশি সূর্যের আলো ও তাপ প্রতিফলিত করে ফিরিয়ে দেয়। এমনকি, বিগত কয়েক দশকে যে অরণ্য ধ্বংস হয়েছে তা পৃথিবীর উষ্ণতা কমাতে সাহায্য করেছে, এমনটাও দাবি করলেন তিনি। অর্থাৎ নির্বিচারে গাছ লাগালেই যে ভূ-উষ্ণায়ন কমবে তা নয়, উল্টে বেড়েও যেতে পারে।

উঙ্গারের গবেষণা পদ্ধতি বা গাণিতিক মডেল ঠিক ছিল কিনা, এই নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণে না গিয়েও বলা যায়, তাঁর গবেষণা প্যান্ডোরার বাক্সটা খুলে দিল। বিজ্ঞানীরা ভূ-উষ্ণায়নের সঙ্গে গাছের, জঙ্গলের সম্পর্ক নিয়ে নানারকম গবেষণায় উৎসাহিত হলেন। এর পাঁচ বছর পর সাংবাদিক গ্যাব্রিয়েল পপকিন নেচার পত্রিকায় এই সংক্রান্ত গবেষণাগুলোর একটা চমৎকার সংক্ষিপ্তসার প্রকাশ করলেন। তাতে দেখা যাচ্ছে, গাছের কার্বন ডাই অক্সাইড গ্রহণ করা ও পৃথিবী ঠান্ডা থাকার সম্পর্কটা তেমন সরলরৈখিক নয় যেমন আমরা পাঠ্যপুস্তকে পড়ি। সম্পর্কটা এতই জটিল যে ব্যাপারটা আজও পুরো বুঝে ওঠা যাচ্ছে না। কিন্তু এটুকু বোঝা যাচ্ছে যে, ভূ-উষ্ণায়নের সমাধানে শুধুমাত্র গাছের ওপর ভরসা রাখাটা ঠিক হবে না। কার্বন নিঃসরণ কমানো জরুরি। কিন্তু সে ব্যাপারে রাষ্ট্রনায়কদের কোনও সদিচ্ছা দেখা যাচ্ছে না। সম্প্রতি রাষ্ট্রসংঘের কনফারেন্স অফ পার্টিজ ২৬ (COP 26) আবার রাষ্ট্রনায়কদের ফাঁকা প্রতিশ্রুতির বাগাড়ম্বরে পর্যবসিত হল। কিয়োটো প্রটোকলের (স্বাক্ষরিত হয় ১১ ডিসেম্বর ১৯৯৭) লক্ষ্যবিন্দু আবার পিছিয়ে গেল ২০৩০ সালে।
গেছো গল্পটা কিন্তু এখনও বাকি থেকে গেছে। গাছ যদি ভূ-উষ্ণায়নের সমাধান নাই হয় তবে গাছ লাগাব কেন? আর জঙ্গল বাঁচাবই বা কেন? যদি প্রশ্ন করা হয় গাছের রং কী? অধিকাংশ মানুষ উত্তর দেবেন, সবুজ। কিন্তু শুধু সবুজ রং দিয়ে আম গাছ আঁকতে দিলে পারবেন না। কারণ গুঁড়িটার রং খয়েরি। আসলে ছোট থেকে আমাদের শেখানো হয়েছে, গাছের রং সবুজ। তেমনই গাছ বলতেই আমাদের চোখে ভেসে ওঠে বিরাট গুঁড়িওলা বৃক্ষের ছবি যে কার্বন ডাই অক্সাইড নেয়, অক্সিজেন দেয়।
আম গাছ আঁকার কথা হচ্ছিল; আসুন না, একটা বিরাট বড় আম গাছের নীচে গিয়ে দাঁড়ানো যাক। দেখতে পাবেন, গাছের ওপর অনেক পরগাছা হয়ে আছে। ভ্যান্ডা, লরেন্থাস, বিভিন্ন ফার্ন। ওরাও কিন্তু গাছ। হয়তো বা দেখতে পাবেন, অচেনা কোনও লতা উঠে গেছে গাছটার গুঁড়ি বেয়ে। ঝুপসি পাতার ছায়ায় গজিয়েছে ভাঁট বা কালকাসুন্দার জঙ্গল। পায়ে পায়ে এসে দাঁড়ান পাশের ছোট্ট ডোবাটার পাশে। পাড়ের মাটিতে মিশে থাকা বিরুৎ, জলে ভেসে থাকা পানা, সবাই কিন্তু গাছ। কিন্তু যাদের দেখতে পাচ্ছেন না তারাই আপনার শ্বাসের বাতাসের মূল জিম্মেদার। ডোবার জলে মিশে আছে অজস্র আণুবীক্ষণিক গাছ, ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন।
সমগ্র জীবজগতের বেঁচে থাকতে গেলে যতটা অক্সিজেন প্রয়োজন তার ৫০ শতাংশ থেকে ৮৫ শতাংশ আসে সমুদ্রের ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন থেকে। মাপার পদ্ধতি বড়ই জটিল, তাই মাপের এতটা ফারাক। তাছাড়া এই মাপ অবস্থাভেদে, দিনের বিভিন্ন সময় ভেদে, ঋতুভেদে বদলায়। কিন্তু মোদ্দা ৫০ শতাংশ, এটা বলাই যায়। আর এই ৫০ শতাংশের মধ্যে ২০ শতাংশ আসে মাত্র এক ধরনের ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন থেকে, তার নাম প্রোক্লোরোকক্কাস (Prochlorococcus)। শুধু তাই নয়, কার্বন চক্রে প্রোক্লোরোকক্কাসদের একটা বড় ভূমিকা আছে। সেই কারণেই এরা জলবায়ু নিয়ন্ত্রণেও ভূমিকা রাখে। কিন্তু সমুদ্রে ক্রমবর্ধমান প্লাস্টিক দূষণ এদের বৃদ্ধি ও সালোকসংশ্লেষের হার কমিয়ে দিচ্ছে।১০ ২০ শতাংশ, অর্থাৎ প্রতি পাঁচটি শ্বাসের একটি যাদের কাছ থেকে পাই, সেই গাছেদের বাঁচানোর জন্যই সমুদ্র নির্বিষ রাখাটা জরুরি।

চলুন ফিরে যাই সেই আম গাছটার কাছে। হয়তো বা দেখতে পাবেন তার পাতার ওপর অদ্ভুতদর্শন এক শুঁয়োপোকা। কমন ব্যারন প্রজাপতির লার্ভা। দেখতে পেতে পারেন লরেন্থাসের ফুলগুলোতে দুর্গা টুনটুনি, মৌটুসি ইত্যাদি পাখি সরু বাঁকা ঠোঁট ডুবিয়ে মধু খাচ্ছে। আমের মঞ্জরী ঘিরে উড়তে দেখবেন রকমারি মৌমাছি, বোলতা, ভিমরুলদের। সন্ধে ঘনালে কচি আমের কুষি চেখে দেখতে আসবে বাদুড়ের দল। আপনার সামনে দিয়ে যে বাদামি রঙের শুঁয়োপোকাটা নিজের লালায় বোনা সরু সুতোয় ঝুলে নেমে আসছে, সে কমন জেজেবেল প্রজাপতির লার্ভা। আম গাছের ওপরে গজানো লরেন্থাসের পাতা ছাড়া ওরা আর কিছু খায় না। কান পাতুন গাছটার গায়ে। শুনতে পেলেও পেতে পারেন, ম্যাঙ্গো স্টেম বোরার বিটলের লার্ভার কাঠ কুরে কুরে খাবার শব্দ। আমের ডাল ফুটো করে তার ভেতরে ওদের বাস। গুঁড়ির গা বেয়ে ওঠানামা করছে নালসে পিঁপড়ের দল। গাছের পাতা জুড়ে জুড়ে ওরা বাসা তৈরি করে। নজর থাকলে দেখবেন, আম গাছের নীচে যে ভাঁট ফুলের জঙ্গল, তার পাতায় নানা জাতের পিঁপড়ের আনাগোনা। ফুলের মতো ভাঁটের পাতাতেও মৌ-গ্রন্থি থাকে। ওরা সেখান থেকে মধু খাচ্ছে। খুঁজে পেতেও পারেন কালকাসুন্দার পাতায় ইমিগ্র্যান্ট প্রজাপতির ডিম। খুঁজে বের করুন একটা বর্ষীয়ান আম গাছ। তার সঙ্গে কিছুটা সময় কাটান। নিজের চোখেই দেখতে পাবেন অনেক কিছু।
একটা গাছ তাই শুধুমাত্র একটা প্রাণ নয়। গাছটা কেটে ফেললে সেইসঙ্গে এই হাজারো প্রাণ হারিয়ে যাবে। নতুন করে দশটা গাছের চারা লাগালেও এদের ফিরে পেতে কেটে যাবে আপনার অর্ধেকটা জীবন, হয়তো বা অর্ধেক শতাব্দী। ততটা সময় আপনার হাতে আছে তো?
চলে আসুন কাছের জঙ্গলে। আম গাছের কাছে দেখা চেনা প্রজাপতি ব্যারন, জেজেবেল বা ইমিগ্র্যান্টদের আর খুঁজে পাবেন না। তার বদলে দেখবেন গ্রেট মরমোন, সটুথ বা ডার্ক জুডিদের। কেমন করে এতটা বদলে যায় একটা জঙ্গলের জীববৈচিত্র্য? চেষ্টা করলে নিজেই আবিষ্কার করতে পারবেন। না হলে তথ্যসূত্র থাকল।১১ নিজেই বুঝতে পারবেন, জঙ্গল ধ্বংস হলে তা ফিরে পাওয়া কতটা কঠিন, কতটা সময়সাপেক্ষ। ভূ-উষ্ণায়ন কমাতে না হলেও, জীববৈচিত্র্য বাঁচাতে জঙ্গল রক্ষা করা কতটা জরুরি।
ছোট থেকে আমাদের শেখানো একটা গণ্ডির মধ্যেই আমরা আটকে থাকতে ভালবাসি। জঙ্গল ধ্বংস হোক, হারিয়ে যাক জীববৈচিত্র্য, সমতল হয়ে যাক পাহাড়, বিষিয়ে যাক সমুদ্র, আমরা বাজার অর্থনীতির শেখানো ছকে নির্বিচারে শুধু গাছ লাগিয়ে যাব! গাছ অবশ্যই লাগাতে হবে। কিন্তু কোথায় কী গাছ লাগাব, কেন লাগাব? তাতে ভূ-উষ্ণায়ন কমবে না বাড়বে, অক্সিজেন পাব কিনা, সেই গাছ জীববৈচিত্র্যকে ধারণ করতে পারবে কিনা? গাছ লাগানোর আগে এই প্রশ্নগুলো নিয়ে ভাবনাচিন্তাও জরুরি। আসলে মানুষ ভবিষ্যতের জীবনমরণ সমস্যা নিয়ে মাথা ঘামাতে বিশেষ উৎসাহী নয়, যতটা সে তার আশু সমস্যা নিয়ে নড়েচড়ে বসতে আগ্রহী। মউরিন ক্রুপার ও তাঁর সঙ্গীদের সমীক্ষা তাই বলছে। ভূ-উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যাটা বিশ্ব-রাজনীতি ও অর্থনীতির পরিচালকদের কাছে ভবিষ্যতের সমস্যা, আগামী প্রজন্মের সমস্যা। কাজেই এ ব্যাপারে তাঁরা নিজে থেকে কিছু করবেন সেটা আশা করা যায় না। কারণ, কিছু করতে গেলে প্রকৃতির মালিকানা বিসর্জন দিয়ে, মুনাফার লোভ ছেড়ে তাঁদের এগিয়ে আসতে হবে। তার অর্থ হল বাজার ও পুঁজিনির্ভর সমাজব্যবস্থা ভেঙে পড়া।
বিভিন্ন দেশের নতুন প্রজন্মের ১০ হাজার ছেলেমেয়েদের মধ্যে করা এক সমীক্ষা বলছে, তাদের ৬৮ শতাংশ ভূ-উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যা নিয়ে দুঃখিত ও ভীত, ৬৩ শতাংশ উদ্বিগ্ন ও ৫৭ শতাংশ ক্রোধান্বিত। কারণ, এই সমস্যার ফল তাদের জীবৎকালেই ভুগতে হবে। তাদের কাছে এটা জীবন-মরণের আশু সমস্যা। বিরাট সংখ্যক ছেলেমেয়ে ‘ক্লাইমেট অ্যাংজাইটি’-র শিকার বলে ল্যান্সেট পত্রিকা জানাচ্ছে।
এই জমাট রাগের ফল আমরা দেখতে পাচ্ছি। একের পর এক আপোসহীন পরিবেশ আন্দোলন জন্ম নিচ্ছে তরুণ প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের মধ্যে থেকে। Fridays for Future (FFF), Youth Advocates for Climate Action Philippines (YACAP), March for Science ইত্যাদি তাদের মধ্যে অগ্রগণ্য। তাদের কেউ কেউ নির্দ্বিধায় প্রকৃতির মালিকানা-নির্ভর সিস্টেম বদলানোর ডাক দিচ্ছে। যদিও তার কোনও রাজনৈতিক দিশা এখনও তাদের কাছে নেই। তবু এই গেছো গল্পের নটে গাছটি বোধহয় তাদের হাতেই মুড়োবে।

তথ্যসূত্র:
১) ‘To Save the Planet, Don’t Plant Trees’ Nadine Unger, The New York Times, 20 Sep 2014.
https://www.nytimes.com/2014/09/20/opinion/to-save-the-planet-dont-plant-trees.html?_r=0
২) ‘A Fully Loaded, Double-Barreled Forest Climate Solution’ Bronson Griscom, Nature, 24 Sep 2014.
https://blog.nature.org/science/2014/09/24/forest-nadine-unger-plant-trees-climate/
৩) ‘Plant a Tree, Save the Planet?’ Don C. Bragg, Journal of Forestry, January 2015, pp 5-6.
৪) ‘Human land-use-driven reduction of forest volatiles cools global climate’ Nadine Unger, 24 August 2014, DOI: 10.1038/NCLIMATE2347.
৫) ‘The economics of welfare’ A. C. Pigou, Macmillan and Co. Limited, 1920.
৬) ‘The problem of social cost’ R. H. Coase, The Journal of Law & Economics, Oct 1960 Vol III.
৭) ‘The forest question’ Gabriel Popkin , Nature, Vol 565, pp 280, 17 Jan 2019.
৮) ‘How much do oceans add to world’s oxygen?’ Editors’ Post, https://earthsky.org/earth/how-much-do-oceans-add-to-worlds-oxygen
৯) ‘Ocean Science: The power of plankton’ Paul Falkowski, Nature, volume 483, pp S17–S20, 2012.
১০) ‘Plastic leachates impair growth and oxygen production in Prochlorococcus, the ocean’s most abundant photosynthetic bacteria’ Sasha G. Tetu, Indrani Sarker, Verena Schrameyer, Russell Pickford, Liam D.H. Elbourne, Lisa R. Moore & Ian T. Paulsen, Communications Biology, pp 2:184, 2019.
https://doi.org/10.1038/s42003-019-0410-x www.nature.com/commsbio
১১) ‘The Butterfly Effect Controls Rivers’ Peter Smetacek.
https://www.youtube.com/watch?v=D4qMm3c8W_I
১২) ‘Discounting Human Lives’ Maureen L. Cropper; Sema K. Aydede; Paul R. Portney, American Journal of Agricultural Economics, Vol. 73, No. 5, Proceedings Issue., pp 1410-1415, Dec 1991.
১৩) ‘Young People’s Climate Anxiety Revealed In Landmark Survey’ Tosin Thompson, Nature Vol 597 pp 605, 30 September 2021.
১৪) ‘Climate anxiety in young people: a call to action’ Judy Wu, Gaelen Snell, Hasina Samji, The Lancet, Vol 4 October 2020.
www.thelancet.com/planetary-health
১৫) https://yacap.org/about/

ছবি : ইন্টারনেট

Comments are closed.