ফেরা
মাটি-মায়ের দুধ ছেড়ে যেদিন চলে এসেছি,
সেদিন থেকেই আকাঙ্ক্ষা পুষে রেখেছি ভেতরে
ফিরে যাব আবার আমার পুরনো মায়ের কোলে
যেখানে মেঠোপথে ধুলোর আদরে মার্বেলের সাথে
লুটোপুটি খেত বাড়ন্ত স্বপ্নরা, চাতাল-রোদে
কুলোর বাতাসে ধান থেকে সরে যেত চিটে-ধান
আমি ফিরব সেখানে
যেখানে
রাত্রে অবিরাম ঘুঘু-ডাক নিঃস্বার্থ সঙ্গী হয় অন্ধকারে
যেখানে ভরা মাঘে সর্বাঙ্গ কাঁপলে নিজস্ব অসুখে
অনুগত থাকে প্রিয় কাঁথা, যেখানে কাঁথার ফোঁড়ে
আতুড়ঘরের ঘ্রাণ সেঁটে থাকে; আমি ফিরব সেখানে
নিজের কাছে ফিরে নিজেকে জানিয়েছি এ কথা!
যেখানে সবুজ আহ্বানে পাতায় পাতায় টপকে বেড়ায়
ছুটন্ত উচ্ছ্বাস, প্রান্তিক স্মৃতি জমা আছে সময়-সিন্দুকে
ফিরব সেখানে, এ আমার সাধ ও সাধনা
সেখানে ফিরব আমি; অথবা–
ফিরবে আমার মৃত্যু-পরবর্তী স্মৃতির বাতাস
দরজার ঘুম
ঘুমের ভেতর নির্ঘুমতাই ছিল বেশি
ধানের স্মৃতির ভেতরে খড়কুটোর স্মৃতি স্পষ্ট
বৃক্ষ ছুঁয়ে দেখি গভীরে তার সুষমা, তারও বেশি ক্ষত
অবিরাম তৃষ্ণাতাড়িত কাক, পাখি শ্রান্তিতে থেমে থাক
ফুল ফোটা স্তিমিত হোক কিছুক্ষণ; তাতে কী!
হৃদয়ের পাষাণ চূড়ায় ধীরে ধীরে জমছে শুভ্র আশা
দেয়ালবন্দি সমস্ত ‘আইসোলেশন’ ফুরিয়ে
পৃথিবীর দরজার ঘুম ভাঙবে একদিন
কেননা– মৃত্যুর ভেতরে বেশিটুকু মৃত্যুহীনতা
বেঁচে দাঁড়াবার অকুণ্ঠ ভিড় প্রাণের দরজায়
আশাব্যঞ্জক বিলাপ
আবারও পৃথিবী
কানায় কানায় ভরে উঠবে জন-সমারোহে
মানুষের মুখ দেখে বোঝা যাবে অপ্রত্যাশিত–
মৃত্যুর ভেলা ফিরে গেছে জীবনের ঘাট থেকে
আবারও মানুষের কানে পৌঁছাবে মানুষের স্বর
আবার যোগাযোগে গাঙ্গেয় বদ্বীপে, রাঢ়ে, সমতটে
বরেন্দ্রভূমিতে, দেশ থেকে দেশে, মহাদেশে, জলপথ
ডাঙাপথ, আকাশপথ, মানুষের চলাচলে
স্বজনের প্রাণে প্রাণে ফিরবে কোলাহল
আবার জমবে হাট বটছায়ে
মাটির হাঁড়িতে সেজে উঠবে কুমোর-পাড়া
আবার ঘরে ঘরে শোনা যাবে নির্মাণ শব্দ
মাঝরাতে আবারও ঘুম ভাঙাবে সুদূরের ট্রেন
নৈঃশব্দ্যের ভেতর থেকে নিশ্চয়ই সাড়া দেবে কেউ
সময়ের রশি টানা কর্কশ হাত খসে যাবে ঠিক
শোক-তাপ, পোকা-পাপ সব মুছে
আরও কিছুদিন যদি আয়ু পাই
অনুনয় প্রিয়তম; সদ্য সেরে ওঠা পৃথিবীকে
শুভেচ্ছা জানানোর সুগন্ধি কুঁড়ি রেখো হাতে
Comments are closed.