বা়ংলার প্রথম পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল সাহিত্য পত্রিকা

পিয়াস মজিদের দুটি কবিতা

ফুলগন্ধ অন্ধকার

কল্পনার আল্পনায়
সাজিয়েছি তোমাকে
যে আমি তোমার
আদরের অন্তর্জন্তু।
প্রতিশ্রুত সমুদ্র
দেখাতে দ্বিধা যাকে,
নভো-কুৎসিতে
সে তো ছিল তোমার
মাটিমধুর অববাহিকা।
কতটা উদার-উদাস হলে
তুমি পাবে তার
আত্মার আওয়াজ,
জানা নেই
সম্প্রচারসভ্যতার!
মরচে ধরা নীলিমায়
নিঃশব্দ তারার দামামা
পরিদের পা বেয়ে
পৃথিবীতে নামে
নক্ষত্রনিদ্রার সুররস;
মধুর তামস।
অভাবের দেশে
আলোর বাতাসায়
ঝনঝন করে ওঠে
আমাদের ভিখারি-বাসন।
ক্ষুধা-রক্ত আর রিরংসার রেসিপিতে
জমে উঠে যুদ্ধভোজ
ঘৃণাই যুদ্ধের বাপমা
এত এত প্রকাশ ঘৃণার
অথচ পৃথিবীর প্রতিটি সিনেপ্লেক্সে
চলছে-চলবে বিরতিহীন
প্রেমের পিকচার।
রাতদিন জঙ্গলে বাঁচি
আলাদা করে তাই
বাঁচাইনি বনবিবি।
পাতাদের প্রতিবেদন
কবিতায় লিখে রেখে
কাটা সব গাছের গোড়ায়
নিবেদন করি
মানুষের রক্তমাখা
পুষ্পের করোটি।
রৌদ্র ও ছায়ার
নোনা নটে ডাক শুনি
লাশসিক্ত আমাদের
অনন্ত আগামীর,
বাঁচি বা না বাঁচি
কী লাভ-ক্ষতি কার!
আপাতত আনন্দ অপার
যেতে হবে দূর বহুদূর
আমরা একপাল
আলোর আহার।

অস্ত জানুয়ারির কবিতা

জীবনের জানু থেকে চলে যায় জানুয়ারি। নক্ষত্র নশ্বর, সব স্মৃতি উজিয়ে অ্যালবামে অন্ধকারই
অবিনশ্বর। গোলাপের কাছে বয়েত নিয়ে ছুটি শেয়ালের স্বরগ্রামের দিকে। আমি খুন করি তোমার
আত্মা, তুমি আমার; তারপর উভয়ে নিজেদের হিপোক্রেসির অক্ষরে লিখি লিরিকের আত্মা, গরিবের
গীতিকবিতা। শীতের দিনে মেঘের মেয়েরা ঘুমিয়ে-ঘুমিয়ে স্বপ্নে নিরীক্ষা করে দেখে– কেমন আছে
পৃথিবীর সব মল্লিকা-মৃত্তিকা। সাপের বিষাক্ত পেখমে বন্ধক রেখেছি অন্তর্গত ময়ূরসকল। তাই এই
সানন্দসজ্জা; নিরঞ্জন আমাদের গলায় চিত্রল গুলির গহনা। জলেও জট ভীষণ, একমাত্র আগুন নির্জন।
বিল্লিমারান গলির গালিব হয়ে দাউ দাউ সময়সুতোয় গেঁথে যাই ছাই– রতির রাত্রি, দাঙ্গা-দখল-দোয়েল
ও ধ্বংসের দস্তাবেজ। আর তুমি আমার কান্নার কবরস্থান পেরিয়ে চলে যাচ্ছ দূর রাজস্থানে। এইমতো
মরণের মাতৃভাষা জানুয়ারিতে বিষাদঘন হয়ে কী মধুর ছাপা হয়ে চলে ফেব্রুয়ারির বইমেলার পাতাতে পাতাতে!

অঙ্কন: দেবাশীষ সাহা
মতামত জানান

Your email address will not be published.