শহরের আলো নিভে যাবার পর নক্ষত্রমণ্ডলী ফুটে উঠলে পার্সিয়াসকে খালি চোখেই খুঁজে বের করলেন অমল। তারপর হাঁটতে থাকলেন পার্কের প্রায় মুছে যাওয়া ঘাসের ওপর। তাঁর মুগ্ধ চোখের সামনে দীপাবলি রাতের খেলা আরম্ভ হল উল্কার বর্ষণে।
অনিতা অগ্নিহোত্রী
একটা নতুন ধূমকেতু এসেছে মহাকাশে। পৃথিবী এত দুঃখকষ্টে কাতর, মানুষের পিঠের কাছে দাঁড়িয়ে মৃত্যুভয়। মহাবিশ্ব তার নিজের খেলা খেলে চলেছে এইসবের মধ্যেই। মাসের মাঝামাঝি উত্তর গোলার্ধে দেখা গেছে ধূমকেতুটিকে, কিন্তু সে থাকবে মাত্র পনেরো দিন। তারপর তাকে আবার দেখা যাবে ছ’হাজার ছ’শো আশি বছর পর। বলা যায়, এই প্রজন্মের মানুষদের জন্য সে আর কোনওদিন ফিরবে না। ধূমকেতুটির নাম নিও-ওয়াইজ। মানে কী? নিয়ার আর্থ অবজেক্ট ইত্যাদি বিকট লম্বা একটা নামের আদ্য অক্ষর নিয়ে তার নাম। কিন্তু অমল একটা আক্ষরিক মানে করেছেন। নবজ্ঞানী? তাই তো হয়। যদি নিও লিটারেট মানে নব সাক্ষর হয়, তা হলে—। নাসার বিজ্ঞানীরা নাক লম্বা করে বসে আছেন, নতুন মহাজাগতিক বস্তুর নাম-টাম দেওয়া তাঁদেরই এক্তিয়ারে।
ধূমকেতুর ব্যাপারটা হয়তো অমল জানতে পারতেন না, যদি না তাঁর ছেলে ধ্রুবর উপহার দেওয়া স্মার্টফোনটা না থাকত।
বাড়িতে টিভিটা খারাপ। ধ্রুব বিদেশে। সেখান থেকেই ফোনের ভিডিও কলে চলেছে তার তত্ত্বাবধান। সেই বলেছে, এখন লোক ডাকা যাবে না। রিস্কি। কাগজ আসা তো বন্ধই হয়ে গেল। কাগজ থেকে সংক্রমণ হয় না, এই তত্ত্বে বিশ্বাস করে অমল দু’দিন কাগজ নিয়েছিলেন মে মাসে। এজেন্সির মানুষটা কাকুতিমিনতি করছিল, তার ব্যবসা পুরো বন্ধ হয়ে যাওয়াতে। কিন্তু বিল্ডিংয়ের বাকি সবাই বেঁকে বসল। চল্লিশখানা ফ্ল্যাটের একটা হোয়্যাটস অ্যাপ গ্রুপ আছে। তাদের মধ্যে উত্তেজিত কথা চালাচালি হয়, স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে। ধ্রুব এই গ্রুপের মেম্বার। অমল নন। তাই ধ্রুবই তাকে বলল, পেপার নিয়ে মাথা না ঘামাতে।
মহাবিশ্বে নিজেকে ফিরে দেখা !
বড়োই ভালো।