লুচি খেতে এসে বেচারি কী ঝামেলায় পড়ল। লুচির বদলে কিল, চড়, ঘুষি। আরে আরে, এক সুবেশা মহিলা যে ছেলেটার চুল ধরে ঝাঁকাচ্ছে! লাগছে তো, খুব লাগছে। কে যেন পিঠে কিলও দিল। হাতে লুচির টুকরো নিয়ে কঁকিয়ে উঠল ছেলেটা। আহা রে, খুব লাগছে। কাঁদছে কি? হ্যাঁ, কাঁদছেই তো। চোখে জল।
প্রচেত গুপ্ত
তার নাম শিবনাথ।
এই নাম আসল নয়। ফুটপাতে কুড়িয়ে পাওয়া নাম। আসল নাম শিবনাথ জানে না। জানবার দরকারও নেই। আসল বাপ-মাকেই জানা নেই, তার আবার আসল নাম। ধুস। কুড়িয়ে পাওয়া ফুটপাত, কুড়িয়ে পাওয়া নাম, কুড়িয়ে পাওয়া ঝুপড়ি-মাসি, বলতে গেলে কুড়িয়ে পাওয়া একটা গোটা পৃথিবী নিয়ে কম দিন তো কাটল না। পুরো দশ-দশটা বছর। আর কিছু দরকার কী?
দশের হিসেব ঠিক কিনা তা অবশ্য নিশ্চিত করে বলা যায় না। শিবনাথের জন্মের সন-তারিখ কে-ই বা জানে? শ্যামবাজারের দিক থেকে এলে শিয়ালদা ফ্লাইওভারে উঠতে বাঁদিকে একটা বড় ভ্যাট রয়েছে। রাজ্যের আবর্জনা জমা হয়। সেখানেই কাপড়ে মোড়ানো অবস্থায় পড়েছিল শিবনাথ। পুঁটুলি হয়ে। এক কাকভোরে, কর্পোরেশন ময়লা সাফাইয়ের গাড়ি আসবার আগেই ঝুপড়ি-মাসির চোখে পড়ে। চোখে পড়ে ঠিক না, কানে পড়ে বলাই উচিত। কুঁইকুঁই আওয়াজ শুনে ফুটপাত-মাসি থমকেছিল। বিড়াল-কুকুর না কি? এগিয়ে যায় মাসি। ওমা! এ যে মানুষের বাচ্চা গো! একবারে কুকুরছানার মতোই আওয়াজ করে। ডাবের খোলা, পচা খাবার, ছেঁড়া ন্যাকড়ার মধ্যে একটু একটু নড়াচড়া করছে।
ঝুপড়ি-মাসি সেই পুঁটুলি যত্ন করে তুলে নেয়।
ভালো লাগলো । তবে প্রচেত স্যার এর চেয়ে অনেক দামী গল্প উপহার দিয়েছেন। এক্ষেত্রে এই গল্পে নতুনত্ব কিছুই নেই। তবুও ওনার জাদু ।
একটা চিনচিনে ব্যাথা আছে। তবুও সাহস আছে ফুটপাতের ছেলেটার। সাহস নেই ওর বাবা মায়ের। ভালো লাগলো।
গল্পের মুন্সিয়ানা ওখানেই, পাঠকের মনের কথাটি লেখক বলে দিচ্ছেন, শিবে কে রক্ষা করার কেউ কি নেই? না থাকারই কথা। আস্তাকুঁড়ে ফেলে দেওয়া ছেলেকে রক্ষা করার জন্য তো ফুলমণি মাসিই যথেষ্ট ছিলেন। দুর্ভাগ্য তিনি শীলপাড়ায় নেই।