শাড়িটাকে বাঁ হাতে গোড়ালির ওপর পর্যন্ত তুলে সাবধানে পা ফেলে ঘাটের ধাপ বেয়ে জলে নেমে গেল গঙ্গা। তার সাড়া পেয়ে পুকুরের হাঁসগুলো দু’পায়ে জল কেটে কেটে কাছে আসছিল। একটা একেবারে নীচের ধাপের গায়ে এসে লাগল। গঙ্গা তার পিঠে হাত বুলিয়ে আদর করে দিতেই সে চলে গেল দুলতে দুলতে।
মৃত্তিকা মাইতি
এর আগেও বেশ কয়েকবার গঙ্গার বাপেরবাড়ির লোক ডেকে এনেছে তার শাশুড়ি প্রণতি। সে সংসারের কাজ পারে না, বাপ-মা তাকে কিছুই শিখিয়ে পাঠায়নি— এইসব নিয়ে সালিশি করতে। কিন্তু এবারের অপরাধ শ্বশুরবাড়ির লোকের কাছে গুরুতর। গঙ্গা ডিম খেয়ে ফেলেছে!
বিচার চলছে সামনের ঘরে। গ্রাম বা পাড়ার মাতব্বরদের লাগেনি এই বিচারে। দুই পরিবারের মাথারা বসেছে। বিচারে আট-দশজন থাকলেও রাজহংসী কণ্ঠে একজন মহিলাই ফ্যাঁস ফ্যাঁস করছে।
তোমার ঝি তুমি নিয়ে যাও ভদ্দলোকের পো। এ ভিটায় আর ওর জায়গা হবেনি।
কথাটা ছুড়ে দিয়ে প্রণতি ডানা ঝাপটে খ্যাপা হাঁসির মতো মাথা উঁচিয়ে চৌকির ওপর গিয়ে বসল।
ক’হাত দূরে দেওয়াল ঘেঁষে মেঝেয় বসে গঙ্গার মা তপতী। প্রণতির লম্ফঝম্ফ আরও কিছুক্ষণ চললে তার মাথা হয়তো গড় হয়ে মাটিতে গিয়েই ঠেকবে। ঘোমটাটা আরও একটু টেনে নিয়ে চোখের জল মুছে নেয় সে। যে ঠাকুরের নাম মনে পড়ে তার কাছেই মনে মনে মিনতি করতে থাকে। এবারের মতো মেয়েটাকে বাঁচিয়ে দাও ঠাকুর, ফিরে গিয়েই ভোগ চড়াব। শ্বশুরঘরে জায়গা না হলে মেয়েদের যে দুর্ভোগ, তোমার তো অজানা নয় ঠাকুর। গোটা জীবনটা নষ্ট হয়ে যাবে। কেউ দু’দিন রাখবে না অথচ কথা শোনাতেও ছাড়বে না।
ভালো লাগলো!
অন্যরকম লেখা গল্প। ভালো লাগলো।
ভালো গল্প।
সুন্দর নিটোল এক গল্প
লেখা চলুক । সঙ্গে আছি ।
লূতাতন্তুর সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম জ্যামিতিক বিন্যাস যেমন সূর্যের আলো পড়লে প্রকট হয়ে ওঠে, লেখকের মনন, সহানুভূতি এবং সহমর্মিতার আলোয় প্রস্ফুটিত হয় সমাজের নিয়মের নামে প্রচলিত পীড়নমূলক অব্যবস্থা। সীমিত পাঠ অভিজ্ঞতায় লেখকের বিভিন্ন ছোটগল্পের নির্মিতি, পরিমিতি বোধ এবং বয়নকৌশল মুগ্ধ করেছে বারবার। এই গল্পটিও অনবদ্য লাগলো।