খাওয়া শেষ করে আমরা যখন বারান্দায় বসলাম তখন চারপাশের কোলাহল অনেকটা স্তিমিত হয়ে এসেছে। নানা লজ ও গেস্টহাউসের বাতিগুলোর জ্যোতি কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন শুক্লপক্ষ, মহীরুহর পাতার ফাঁকফোকর দিয়ে আকাশ দেখা যাচ্ছে। তবে আজ সপ্তমী কি অষ্টমী হবে, চাঁদ সবে উঠেছে।
বুদ্ধদেব গুহ
বেলা পড়ে এসেছে। আমরা লোধাশুলি পেরিয়ে বহড়াগড়ায় পৌঁছে ডানদিকে রাঁচির রাস্তাতে না গিয়ে সোজা চলেছি ওড়িশার দিকে। আজ হাটগামারিয়াতে হাট বসেছে। দূর থেকে হাটের শোরগোল কানে আসছে। নানা নারী-পুরুষ নানা পসরা নিয়ে হাটে এসেছে। পেতলের ও কাঁসার জামবাটি, ঝাঁটা, হাতেবোনা নানা জিনিসের পসরার সঙ্গে ছাগল, মুরগি, হাঁস এবং নানা শাকসবজি নিয়ে বসেছে গ্রামের লোকজন। মহুয়ার দোকান চালু হয়েছে, মেয়ে-পুরুষে মহুয়া খাচ্ছে পা ছড়িয়ে বসে। মহুয়ার সঙ্গে বিড়িও খাচ্ছে।
বহড়াগড়ার পরে জঙ্গলের মধ্যে বাঁদিকে সুবর্ণরেখার একটি ধারা বয়ে গেছে। সে ধারার মধ্যে বড় বড় কালো পাথর। স্রোত বইছে পাথরের গায়ে ধাক্কা দিতে দিতে। এ অঞ্চলে কয়েকটি গ্রাম আছে যেখানে পয়রাদের বাস। পয়রা মানে যারা সোনা-রুপোর কারিগর। আমার একটা ছোটগল্প আছে, যার নাম পরী পয়রা। পরী পয়রা অপরূপ সুন্দরী ছিল। তার স্বামী পরীর নিরাবরণ শরীরে আঁতিপাতি করে খুঁজেও পরীকে ধরতে পারেনি। পরীর এক প্রেমিক ছিল, অন্য গ্রামে। সে খুব ভাল বাঁশি বাজাত। তার সঙ্গে পরীর মিলন হয়নি। সেই জন্য মাঝে মাঝে চাঁদনি রাতে পরী নদীপাড়ে গিয়ে তার প্রেমিকের খোঁজ করত। প্রেমিক জলের মধ্যে পাথরের ওপর বসে বাঁশি বাজাত আর পরী আকুল হয়ে তার কাছে গিয়ে পৌঁছত। এইসব নিয়েই পরী পয়রা।
হাটগামারিয়া হাটের বাঁদিকে গাড়িটা পার্ক করলাম।
চিকন বলল, হাটে কি কিছু কিনবেন?
বললাম, না। কিংবা কিনতেও পারি। যা কিছু প্রয়োজন তা তো সব মানুষই কেনে। প্রয়োজনের অতিরিক্ত জিনিস কিনতে আমার খুব ইচ্ছে করে। এই হাটে তুমি একরকমের আয়না পাবে, ছোট ছোট চারকোনা আয়না। সেই আয়নায় মুখ দেখলে নিজের মুখের চেয়েও অনেক বেশি কিছু ধরা পড়ে। আমার আরও একটি ছোটগল্প আছে, তার নাম ‘হাটগামারিয়ার আয়না’। হাটের এই আয়নার কথায় রাজলক্ষ্মীদেবীর বিখ্যাত কবিতার বই ‘ভাব-ভাব কদমের ফুল’-এর একটি কবিতার কথা মনে পড়ে। যেখানে বর্ষীয়সী প্রেমিকা আয়নার সামনে বসে রয়েছেন। তাঁর ন্যাড়া চুল, ফাঁকা দাঁত, কুঞ্চিত মুখাবয়ব ঘিরে আয়না ভ্রূকুটি করছে। কিন্তু সে মহিলা বলছেন, আমার ছিল সে এক আশ্চর্য ভালবাসা, তোর কী ক্ষমতা আছে মিথ্যে করে দিবি সে পাওয়াকে।
বাহ্! কী সুন্দর কবিতা! আমি তো রাজলক্ষ্মীদেবীর কবিতা পড়িনি।
সেটা তোমার দুর্ভাগ্য। রাজলক্ষ্মীদেবী থাকতেন পুণেতে। তাঁর স্বামী ছিলেন আর্মির অফিসার। বেশি লেখেননি, কিন্তু যা লিখেছেন তা অতি উঁচু স্তরের কবিতা। এখন মনে নেই, ভাব-ভাব কদমের ফুল-এর প্রকাশক কে ছিলেন। তবে যদি বইটি জোগাড় করতে পারো, অবশ্যই পড়বে।
আপনি কি রাজলক্ষ্মীদেবীকে কখনও দেখেছেন?
হ্যাঁ। ওঁর কবিতা পড়ে যখন আমি মুগ্ধ তখনই একবার বইমেলাতে পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ডের অফিস থেকে লোক মারফত আমায় ডেকে পাঠালেন মহাশ্বেতাদি। আমি যেতেই বললেন, দেখ লালা। এ তোর একজন বড় ভক্ত। আমার বান্ধবী। এর নাম রাজলক্ষ্মী। এ নিজেও কবিতা লেখে। থাকে পুণেতে। আমি বলেছিলাম, উনি আমার কত বড় ভক্ত তা জানি না কিন্তু আমি ওঁর ভীষণ ভক্ত। রাজলক্ষ্মীদেবী ছিলেন মহাশ্বেতাদির বান্ধবী। সেই প্রথম দেখা। তার অনেক দিন পরে আমি পুণেতে একটি দুর্গাপুজোর উদ্বোধনে আমন্ত্রিত হয়ে গেছিলাম। উঠেছিলাম পুণে ক্রিকেট ক্লাবে। তাদের গেস্টহাউসটি ছিল খুব সুন্দর। সেখানেই সে পুজোর এক হর্তাকর্তা জগদীশচন্দ্র বোস, শিল্পপতি, আমারই জন্য সেই ক্লাবে একটি পার্টি দিয়েছিলেন, যেদিন আমি গিয়ে পৌঁছই, সেদিনই। সেই পার্টিতে রাজলক্ষ্মীদেবী এসেছিলেন তাঁর স্বামীর সঙ্গে। তখন খুব ভাল করে আলাপ হয়েছিল। এ আমার জীবনের এক সম্পদ বলে আমি মনে করি।
গাড়ির দরজা খুলে চিকনকে বললাম, তুমি যাবে আমার সঙ্গে?
আপনার সঙ্গে আমি জাহান্নামেও যেতে রাজি। সেইজন্যই তো সমাজের সব ভ্রূকুটি, মা-বাবার নিষেধ সত্ত্বেও আপনার সঙ্গে একা সিমলিপালের জঙ্গল দেখব বলে চলে এলাম। হাটগামারিয়ার হাটে নামব না, তা কি হয়!
কিছুটা নিস্তেজ হলেও আকাশে তখনও অনেক আলো। হলুদ আলো। আমি গাইলাম— ‘আকাশ আমায় ভরল আলোয়, আকাশ আমি ভরব গানে।’
চিকন বলল, পরের লাইন?
এই তো হচ্ছে মুশকিল! বয়স মানুষকে বড় অসহায় করে দেয়। স্মৃতি বঞ্চনা করে। চোখ তঞ্চকতা করে। মস্তিষ্কের মধ্যে সব কিছুই থাকে। কিন্তু যা প্রকাশ করতে চাই তা প্রকাশে হাজারো বাধা।
সব বাধা কাটিয়ে তো আপনি এখনও একা গাড়ি চালিয়ে এসব দুর্গম জায়গায় ঘুরে বেড়ান। আপনার ধন্যি সাহস।
তা ঠিক। সাহসটুকুই আছে বুকের মধ্যে। কিন্তু সাহসকে সাহচর্য দেওয়ার মতো অনেক কিছুই আজ হারিয়ে গেছে।
হাটের ভেতরে ঢুকে পড়ে চিকন সত্যিই একটি আয়না কিনল। ছোট্ট আয়না। মেয়েদের হ্যান্ডব্যাগে মুখ দেখার যে ছোট আয়না থাকে তার চেয়ে কিছুটা বড় এবং হাতলবিহীন চারকোনা আয়না।
চিকন বলল, বাহ্! কী সুন্দর গন্ধ না হাটে?
বললাম, হ্যাঁ। প্রতিটি নারীর গায়ের গন্ধ যেমন আলাদা, প্রতিটি হাটের গন্ধও তেমন আলাদা। প্রতিটি গাছের গন্ধের মতো। হাটের ধুলোর গন্ধ, সর্ষের তেলের গন্ধ, গুড়ের গন্ধ, হাঁস-মুরগির গায়ের গন্ধ, মহুয়ার গন্ধ, আদিবাসী যুবক-যুবতীর বগলতলির গন্ধ— এসব মিলিয়ে-মিশিয়ে এক আশ্চর্য গন্ধের জগৎ। এ আমার দেশের হাট। রূপে-রসে-বর্ণে-গন্ধে-স্পর্শে অনবদ্য এইসব হাট। এমন হাট তুমি পৃথিবীর কম দেশেই পাবে। এশিয়া এবং আফ্রিকার কিছু হাটে হয়তো পাবে। কিন্তু ইউরোপ, আমেরিকা ও অন্যান্য পশ্চিমী দেশে এমন হাট তুমি খুঁজে পাবে না।
কয়েক জায়গায় নতুন ওঠা এঁচোড় এবং কাঁচা আম দেখা গেল। চিকন কোঁচড়ভরে ক’টি আম নিল। বলল, এঁচোড় নেওয়ারও ইচ্ছে ছিল, কিন্তু রাঁধবে কে!
কেন, তুমি রাঁধতে পার না?
আমি পারি মোটামুটি রাঁধতে। কিন্তু আমরা তো হোটেলে বা বাংলোয় উঠব। সেখানে কি রাঁধা সম্ভব হবে?
নিয়ে রাখো না। রান্নার বন্দোবস্ত পরে করা যাবে।
আমগুলি নিল চিকন। আর দু’টি এঁচোড় আমি নিলাম দু’হাতে। হাঁসের ডিম নিয়ে বসেছিল একজন। চিকন কিনতে চাইছিল। কিন্তু আমি বললাম, ডিম নিয়ো না। ডিম অযাত্রা। ডিম আর rum কখনও গাড়িতে নিয়ে ট্র্যাভেল করবে না। আমার বেশ কয়েকবারের অভিজ্ঞতা আছে, এসব নিলেই অ্যাকসিডেন্ট হবে কিংবা অন্য কেলেঙ্কারি ঘটবে। অনেক দিন আগে আনন্দমেলায় আমি একটি গল্প লিখেছিলাম, তার নাম ছিল ‘ডিমেঙ্কারি’। ডিম নিয়ে কেলেঙ্কারির গল্প। তুমি কি পড়েছ?
না তো।
তাতে অবশ্য তোমার দোষ নেই। সম্ভবত তোমার জন্মের আগে সে লেখা প্রকাশিত হয়েছিল। তুমি পড়বেই বা কোথা থেকে!
হাটে আরও ঘোরাঘুরি করতে করতে আলো আরও নিস্তেজ হল। বললাম, চলো গাড়িতে ফিরি।
চিকন শুধোল, আমরা কোথায় যাচ্ছি এখন?
আমরা যাব বাংরিপোসি। রাতটা সেখানেই কাটাব। কালকে সকালে প্রাতরাশ করে আমরা যাব সিমলিপালের দিকে। জোশিপুরের আগে সিমলিপালের গেট দিয়ে আমরা ঢুকব।
গাড়ির দিকে ফিরতে ফিরতে আমি চিকনকে বললাম, যে বাংলোয় রাতটা থাকব ভেবেছি সেই বাংলোটির চৌকিদার একটি মেয়ে। তাকে সবাই মাউসি (মাসি) বলে ডাকে। সঙ্গে তার এক ভাইপো কিংবা বোনপো থাকে, সাহায্য করার জন্য। অনেক বছর আগে এই বাংরিপোসির বাংলোয় দু’রাত ছিলাম। এবং কলকাতায় ফিরে একটি উপন্যাস লিখেছিলাম, তার নাম ‘বাংরিপোসির দু’রাত্তির’। সে উপন্যাসটি জনপ্রিয় হয়েছিল এবং কলকাতা থেকে বাংরিপোসির দূরত্ব বেশি না হওয়ায় কলকাতার মানুষজন বাংরিপোসি আসার জন্য পাগল হয়েছিল। যার ফলস্বরূপ এখন নাকি বাংরিপোসি একটি ট্যুরিস্ট স্পট হয়ে গেছে। বহু লজ ও রেস্টহাউস বাংরিপোসিতে তৈরি হয়েছে, যেখানে অগণিত পর্যটক নিয়মিত আসেন। এ আমার শোনা কথা। অনেক বছর পরে আসছি, তাই এবার স্বচক্ষে দেখব, যা শুনেছি তা সত্যি কিনা।
আপনার ভাল লাগে না? আপনার উপন্যাস পড়েই যে এত মানুষ এখানে আসেন এবং এই অখ্যাত নির্জন জায়গাটি একটি ট্যুরিস্ট স্পটে পর্যবসিত হয়েছে, একথা জেনে আপনার ভাল লাগে না?
অবশ্যই ভাল লাগে, আবার খারাপও লাগে। ভাল লাগে এইজন্যই যে, যে কোনও লেখকের কাছেই তাঁর লেখার রয়্যালটি যদিও পুরস্কারস্বরূপ। কিন্তু এই পুরস্কার তার চেয়ে অনেক বড় পুরস্কার। এই দীন লেখকের কলমে যে এত জোর আছে তা আবিষ্কার করেই ধন্য মনে হয়।
শুধু বাংরিপোসিই বা কেন। আপনার লেখা পড়েই তো বাঙালিরা পালামৌর বেতলা ন্যাশনাল পার্ক এবং তার অধীনে অগণ্য বনবাংলোয় গেছেন। আপনি হয়তো জানেন না, পালামৌর এই ন্যাশনাল পার্কের গেম ওয়ার্ডেন সঙ্গম লাহিড়ি একটি কোয়েশ্চেনেয়ার তৈরি করে পর্যটকদের মধ্যে বিলি করেছিলেন। এবং তাতে নব্বই শতাংশ পর্যটকই লিখেছিলেন যে তাঁরা পালামৌ আসেন বুদ্ধদেব গুহর লেখা উপন্যাস পড়ে।
পালামৌ সম্পর্কে আগ্রহ কিন্তু প্রথম জাগান সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, বঙ্কিমচন্দ্রের দাদা।
সেটা নিশ্চয়। কিন্তু উনি তো পালামৌকে ওপর-ওপর দেখেছিলেন। আপনার মতো তন্নতন্ন করে তো দেখেননি। পাঠকদের চেনানওনি।
জানি না, তা হয়তো হবে। তবে এ কথা ঠিক, ‘কোয়েলের কাছে’ এবং ‘কোজাগর’ পড়েই হাজার হাজার বাঙালি পাঠক-পাঠিকা পালামৌয়ের প্রতি আগ্রহী হয়েছিলেন।
কোজাগরের সঙ্গে অন্যান্য বইয়ের কোনও তুলনা হয় না। কোজাগর এ অঞ্চলের ওরাঁও অধিবাসীদের জীবনের একটি দলিল। এবং এই দলিলে যেভাবে আপনি সামাজিক দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ জাগিয়ে তুলেছেন তা আপনার অন্য খুব কম উপন্যাসেই আছে।
তুমি মনোযোগী পাঠক। তুমিই ভাল বলতে পারবে। নিজের মুখে নিজের প্রশংসা করাটা ভদ্রজনোচিত কাজ নয়। তবে এ প্রসঙ্গে ‘একটু উষ্ণতার জন্য’-র পটভূমি, ম্যাকলাস্কিগঞ্জ— যা রাঁচি এবং পালামৌ জেলার সীমান্তে অবস্থিত— তারও বিশেষ ভূমিকা আছে। প্রকৃতি এবং বনাঞ্চলের মানুষদের যে ছবি একটু উষ্ণতার জন্য-তে চিত্রিত আছে তা খুব কম উপন্যাসেই আছে। এছাড়াও আর একটি উপন্যাস আছে আমার, যার নাম ‘বাসনাকুসুম’। এটির পটভূমি মহুয়া-মিলন। মহুয়া-মিলন হল বারকাকাণা-ডাল্টনগঞ্জের মধ্যে ম্যাকলাস্কিগঞ্জের পরের স্টেশন। মহুয়া-মিলনের পরে চান্দোয়া-টোডি। এইসব অঞ্চলই বাসনাকুসুম-এর পটভূমি। তুমি কি পড়েছ বাসনাকুসুম?
না। ওই বইটি তো পড়িনি।
শিল্পী সুধীর মৈত্রের আঁকা সেই বইটির প্রচ্ছদ। যে লাইনটি গভীর জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে চলে গেছে গোমো থেকে বারকাকাণা হয়ে উত্তরপ্রদেশের চোপানের দিকে, সেই রেলপথেই যে কী চমৎকার চমৎকার নামের স্টেশন আছে তা জানলে অবাক হতে হয়। যেমন বোকারো— বোকারো একটি নদীর নাম। যেখানে পরে একটি ইস্পাত কারখানা গড়ে উঠেছে। গুমিয়া— যেখানে পরে একটি বিস্ফোরকের কারখানা গড়ে তুলেছে ইন্ডিয়ান এক্সক্লুসিভ কোম্পানি, যা আইসিআই কোম্পানির সাবসিডিয়ারি। এছাড়াও আছে চৈটর, রিচুহুটা, হেহেগাড়া, ছিপাদোয়ার।
গাড়িতে উঠে, গাড়ি স্টার্ট করে এগোনো গেল বাংরিপোসির দিকে। আমরা যখন বাংরিপোসি পৌঁছলাম তখন সন্ধে হয়ে গেছে। পৌঁছে সত্যিই অবাক হয়ে গেলাম। জায়গাটিকে চিনতেই পারছিলাম না। পথের দু’পাশে এত লজ ও হোটেল রয়েছে যা সত্যিই অভাবনীয়। সেই বাংলোটিকেও আর চেনা যায় না। আগে সেটি ছিল ছোট দু’কামরার একটি বনবাংলো। সামনে একটি অতিকায় মহীরুহ ছিল, বট অথবা অশ্বত্থ। আর পেছন দিকে ছিল রুখু, ফাঁকা টাঁড়। সে বাংলোটি বিস্তৃত করা হয়েছে এবং তাতে এয়ারকন্ডিশনার লাগানো ঘরও আছে। তবে দুঃখের বিষয়, জানলাম যে মাউসি কিছুদিন আগেই গত হয়েছেন। আমরা অন্য অনেক জায়গাতেই থাকতে পারতাম। কিন্তু বাংরিপোসিতে দু’রাত্তির লেখার স্মৃতিতেই আমরা ওই বাংলোয় উঠলাম। আগে জানিয়ে আসায় জায়গা পেতে অসুবিধা হয়নি। কিন্তু মাউসির অভাব খুবই বোধ করছিলাম। মাউসিরা অবশ্য এত দীর্ঘদিন ধরে যত মানুষ বাংরিপোসি গেছেন এবং থেকেছেন তাঁদের প্রত্যেককেই এক যুবক লেখকের কথা তথা আমার কথা এবং আমার নামও উল্লেখ করেছেন। সে খবর আমি কলকাতায় বসেই পেয়েছি। তবে আজকের এই বৃদ্ধকে দেখে মাউসি চিনতে পারতেন কিনা সেকথা জানি না। তবে আমি তাঁকে মনে করছিলাম খুব।
আমার বারণ সত্ত্বেও চিকন ক’টি হাঁসের ডিম কিনেছিল। রাতে আমাদের নিয়ে যাওয়া সেই হাঁসের ডিমের অমলেট, এঁচোড় দিয়ে রাঁধা ডালনা আর মুগের ডালের খিচুড়ি দিয়ে খাওয়া শেষ করে আমরা যখন বারান্দায় বসলাম তখন চারপাশের কোলাহল অনেকটা স্তিমিত হয়ে এসেছে। নানা লজ ও গেস্টহাউসের বাতিগুলোর জ্যোতি কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন শুক্লপক্ষ, মহীরুহর পাতার ফাঁকফোকর দিয়ে আকাশ দেখা যাচ্ছে। তবে আজ সপ্তমী কি অষ্টমী হবে, চাঁদ সবে উঠেছে।
চিকন বলল, আমরা আলাদা ঘরে শোব কেন?
তা নইলে তোমার বাবা আমায় ঠ্যাঙাবে বলে। তা ছাড়া সমাজ আছে না!
আমার বয়েই গেছে। আপনার সঙ্গে এই দুর্গম অরণ্য-পাহাড়ে যখন আসতেই পারলাম তখন একঘরে শুতে আপত্তি কী?
আমার আপত্তি নেই। তবে তুমি সুন্দরী তরুণী, তোমার সামনে অগাধ ভবিষ্যৎ, কোনও সুন্দর যুবককে তুমি বিয়ে করবে, জীবনে প্রথমবার তার সঙ্গে মিলিত হবে শারীরিকভাবে, তোমার কত কল্পনা, কত সুগন্ধী রাতের স্বপ্ন। এই সমস্ত সম্ভাবনা তুমি একজন বৃদ্ধের সঙ্গে একঘরে একখাটে শুয়ে নষ্ট করতে যাবে কোন দুঃখে? তুমি ছেলেমানুষ, পাগলামি তোমায় মানায়। কিন্তু আমি পরিণতবয়স্ক বলেই সে পাগলামিতে সায় দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। শুধু পরিণতবয়স্ক নই, আমি পরিণতমনস্ক বলেও। বেআক্কেলে হওয়া যৌবনের ধর্ম। কিন্তু জীবনের শেষে এসে জীবনকে উল্টেপাল্টে, চেটেপুটে খেয়ে একজন মৃত্যুপথযাত্রীর পক্ষে এই বেআক্কেলেপনা আদৌ উচিত নয়। আমি তোমার গুরুজনসদৃশ। গুরুজন হয়ে লঘুজনের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ কালিমালিপ্ত করা একজন দায়িত্বশীল মানুষ হিসেবে আমার পক্ষে সমীচীন নয়। শরীরের মধ্যে অনেক আনন্দ থাকে নিঃসন্দেহে। কিন্তু মনের আনন্দ কিছু কম আনন্দ নয়। আমার বয়সে পৌঁছেই এই দুই আনন্দের তুলনা করাটা সম্ভব। তুমি নবীনা, তুমি প্রাণোচ্ছল। তোমার পক্ষে যৌবনের দস্যিপনা হয়তো মানানসই। কিন্তু আমার পক্ষে নয়। তোমার সানন্দ সম্মতির সুযোগ আমি হয়তো আমার অর্থ, যশ, প্রতিপত্তির কারণে সহজেই নিতে পারি। কিন্তু তা নিলে নিজেকেই ছোট করা হবে। সেই ক্ষণিক শারীরিক আনন্দের সঙ্গে এই দীর্ঘস্থায়ী এবং চিরন্তন মানসিক আনন্দ কখনওই তুলনীয় নয়। তুমি যখন যৌবন থেকে প্রৌঢ়ত্বে পৌঁছবে এবং প্রৌঢ়ত্ব থেকে বার্ধক্যে, সেদিনই কেবল তুমি আমার আজকের বলা কথাগুলো উপলব্ধি করবে। আজ এই নিয়ে তোমার সঙ্গে কোনওরকম তর্ক করতে চাই না আমি।
তার পরে আরও বললাম, তোমায় একটা মজার গল্প বলি। তুমি কুমারপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের নাম শুনেছ?
কোন কুমারপ্রসাদ? যিনি লেখক?
হ্যাঁ। কুমারপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বিখ্যাত লেখক, সঙ্গীতজ্ঞ, পণ্ডিত, লখনউয়ের ধূর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের একমাত্র সন্তান। ধূর্জটিপ্রসাদের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথেরও ঘনিষ্ঠতা ছিল এবং তৎকালীন লখনউতে বহু গুণী বাঙালির অধিষ্ঠান ছিল। ব্যারিস্টার অতুলপ্রসাদ সেন এবং আরও অনেক অধ্যয়নশীল, অধ্যাপক এবং যশস্বী বাঙালিরা তখন থাকতেন সেখানে। কুমারদা— আমি ওঁকে দাদা বলেই ডাকতাম, কোল ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান ছিলেন। তবে গনিখান চৌধুরী সাহেবের সঙ্গে তাঁর বনিবনা না হওয়ায় তিনি চাকরি থেকে ইস্তফা দেন। তিনি শুধু সঙ্গীতরসিক নন, ভাল সঙ্গীতজ্ঞও ছিলেন। ওঁর লেখা বই, ‘কুদরত রঙ্গিবিরঙ্গী’ দেশ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছিল। এবং সেটি বলতে গেলে বাংলা সাহিত্যের উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের গায়ক ও যন্ত্রীদের সম্বন্ধে একটি দলিল বিশেষ। কুদরত রঙ্গিবিরঙ্গী পড়লে তুমি জানতে পারবে কুমারপ্রসাদ ঠিক কোন উচ্চতার মানুষ ছিলেন এবং কত বড় রসিক মানুষ ছিলেন। উনি একজন ক্রিকেট বোদ্ধাও ছিলেন। ক্রিকেটের ওপর লেখা তাঁর বইও আছে। শেষজীবনে তিনি ক্যানসারে আক্রান্ত হন। সে সময়ে কলকাতা টালিগঞ্জের সঙ্গীত রিসার্চ অ্যাকাডেমির নানা অনুষ্ঠানে কুমারদা যেতেন। গান গাইতে নয়, শুনতে। আমিও যেতাম।
একবার সঙ্গীত রিসার্চ অ্যাকাডেমি থেকে একটি সেমিনারের বন্দোবস্ত হয়। আলোচ্য বিষয় ছিল, ‘why the younger generation is not so much interested in classical music’। সেই সেমিনারে সারা দেশের তাবড় তাবড় মিউজিশিয়ান এবং মিউজিকোলজিস্টরা আমন্ত্রিত হয়ে আসেন। অ্যাকাডেমির ফ্যাকাল্টি যাঁরা ছিলেন তাঁরা তো অংশগ্রহণ করেইছিলেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন উলহাস কাসলকর, অরুণ ভাদুড়ি, অজয় চক্রবর্তী, আরও অনেকে। তখন ডিরেক্টর হিসেবে বিজয় কিচলুসাহেব সবে অবসর নিয়েছেন। তার কিছুদিন আগে তাঁর ছোটভাই রবি কিচলুসাহেব গত হয়েছেন। সে সময়ে ডিরেক্টর ছিলেন লখনউ নিবাসী অমিত মুখার্জি। সেই সেমিনারে আমাকেও একটি পেপার পড়তে আমন্ত্রণ জানানো হয়। এক দিনেরই সেমিনার ছিল। তার আগের দিন ককটেল পার্টি ছিল। কুমারদাও সেখানে আমন্ত্রিত ছিলেন। একজন জিজ্ঞেস করলেন, কুমারদা কেমন আছেন? কুমারদা বললেন, আমি তো চমৎকার আছি। কিন্তু শরীরটা একটু বেগড়বাই করছে। শরীর আর মনকে তুমি যদি আলাদা করে দেখতে পার, তার চেয়ে বড় শিক্ষা এবং বড় বুদ্ধিমত্তা আর কিছুই হতে পারে না।
সেই সেমিনারের দিন একটি মজার ঘটনা ঘটেছিল, তোমায় বলি। সবাইকে এ গল্প বলা যাবে না। কারণ লোকে আমায় আত্মপ্রচারের অপরাধে অপরাধী করতে পারেন। আত্মপ্রচার এবং আত্মপ্রসার— এসবই আমার অত্যন্ত অপছন্দের। কিন্তু এই ঘটনাটি তোমায় বলছি, পাঁচকান কোরো না। সেমিনারের মধ্যে কফি-ব্রেক হয়েছে। আমি হাতে কফির কাপ নিয়ে হলের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যাচ্ছি, এমন সময় হলের উল্টোদিক থেকে সন্ধ্যা মুখার্জি আসছিলেন, তাঁর সঙ্গে মুখোমুখি দেখা। উনি আমাকে বললেন, আপনি বুদ্ধদেব গুহ না! আমি মাথা হেলালাম। উনি বললেন, কী ভাল গান করেন আপনি! দূরদর্শনে একাধিকবার আপনার খালি গলায় টপ্পা শুনে আমি অভিভূত। আমি বললাম, একটা কাগজে যদি লিখে দিতেন তা হলে আমি গলায় লকেট করে ঝুলিয়ে ঘুরে বেড়াতাম। উনি হেসে বললেন, ঠাট্টা নয়। আপনার সঙ্গে এভাবে দেখা হয়ে যাবে আমি ভাবতেও পারিনি। আজকের দিনটি আমার কাছে বড় সুখের।
চিকন বলল, আমি ওঁর সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত।
আমি বললাম, তফাত হচ্ছে এই, তুমি আর সন্ধ্যা মুখার্জি এক নও।
তখন কুমারদা কেমো নিয়ে বেড়াচ্ছেন ক্যানসার উপশমের আশায়। বউদি নিজেই অসুস্থ। পায়ের হাড় ভেঙে যাওয়ায় লাঠি হাতে চলাফেরা করেন। কাজেই বউদির পক্ষে সঙ্গে যাওয়া সম্ভব ছিল না। কুমারদাকে নিয়ে এক একবার তাঁর কোনও ছাত্র বা ছাত্রী যেতেন। একবার তিনি বম্বেতে গেছেন, কেমো নেওয়ার জন্য। সঙ্গে গেছেন নাগপুরের এক ছাত্রী, যাকে আমিও ব্যক্তিগতভাবে চিনি কিন্তু ন্যায্য কারণেই তাঁর নাম আমি তোমার কাছে উল্লেখ করছি না। ফিরে আসার পরে আমি জিজ্ঞেস করলাম, কুমারদা, উপশম কিছু হল? কুমারদা বললেন, কিছুই তেমন হল না, তবে বড় দুঃখ হল। আমি বললাম, দুঃখ কীসের? কেমো করতে গিয়ে কি যন্ত্রণা হল খুব? উনি বললেন, সে তো নিত্যসঙ্গী। অসুখ মানেই সুখের অভাব। যন্ত্রণা তো হবেই। দুঃখ হল অন্য কারণে। আমরা একই ঘরে ছিলাম, একই খাটে দু’জন। খাটটি চার ফিট চওড়া, সাত ফিট লম্বা। বুঝে দেখো, বৃদ্ধ আমি আর যুবতী ও, একই খাটে পাশাপাশি শুয়ে রাত কাটালাম অথচ কিছুই করতে পারলাম না। ওঁর কথায় আমি হো হো করে হেসে উঠলাম। উনি বললেন, তুমি হাসছ? এতবড় একটা দুঃখের ঘটনা ঘটে গেল আর তুমি হাসছ! এই ছিলেন কুমারদা।
তুমি আমার সঙ্গে একঘরে থাকতে চাইছিলে না? তুমিও কি চাও যে আমি অমন দুঃখ পাই! বেশ তো সুখে আছ, সুখেই থাকো। আমাকেও সুখে থাকতে দাও।
চিকন বলল, অন্য প্রসঙ্গে যাই। আপনি বলেছিলেন না, বাংরিপোসির ঘাটে নিয়ে যাবেন? হাতিরা সেখান দিয়ে পার হয় প্রায়ই।
চলো। ঘর দুটো বন্ধ করে দাও।
আমার প্ৰিয় মানুষ বুদ্ধদেব গুহ মহাশয় কে আত্ম কথনে পেয়ে আমি আপ্লুত। যেসব কথা কোথাও হয়নি বলা যাই নি জানানো তার জন্য মনের পাত পেতে হাত পেতে বসে থাকছি।
অসাধারণ লেখনী। ভীষণ ভালো লাগছে ।
কি অনবদ্য রচনা
Kono kotha hobe na 🌹
I’m really excited. After a long wait, getting another Bengali literary magazine with a promise of excellence.
Why not a print version for people who prefers the aroma of paper?
প্রনাম নেবেন। অনেক কিছুর ভেতরে আপনি
একজন ওড়িশার বহু লেখকদের তুলনায় অনেক বেশী “ওড়িশা বিশারদ”; হলপ করে বলতে পারি।
আপনার গলা নিয়ে সন্ধ্যাদি অতি সত্য বলেছিলেন; আপনার ভরাট গলার আন্দোলনের কোনো জবাব নেই। ভাল থাকবেন। অপেক্ষায় থাকলাম।
কি বলব! বহুবছর আগে বই মেলায় আলাপ হয়েছিল। তখন ‘দেশ’ এ মাধুকরী চলছে। সপ্তাহে সপ্তাহে অপেক্ষায় থাকি। সেই নিয়ে কথা বলতে যেতেই কাঁধে হাত রেখে সস্নেহে অনেক লেখকের সাথে আলাপ করিয়েছিলেন। তখন সুবেশা মহিলাদের ওনার প্রতি আকর্ষণ দেখেছিলাম। বাপরে। আপনাকেই মানায়। নারী আর প্রকৃতির শরীরের গহন গোপন উন্মোচন আপনার মত কারো কলমে দেখিনি। আরো লিখুন সুস্থ থাকুন।
প্রিয় লেখক বুদ্ধদেব গুহ’র আত্মকথা পড়ে খুব ভালো লাগলো। ম্যগাজিন কর্তৃপক্ষকে অশেষ ধন্যবাদ।
আমার প্রিয় সাহিত্যিক বুদ্ধদেব গুহ স্যারের আত্ম কথা,আবার নতুন করে নতুন কিছু জানতে পারবো।সেই ছেলে বেলায় স্কুল জীবনে প্রথম কোয়েলের কাছে পড়ে কখন যে জঙ্গল পাহাড়ের প্রেমে পড়েছি বার বার ছুটে গিয়েছি ছোটনাগপুরের মালভূমি ও জঙ্গলে।বাংরিপসি র দুরাত্রি পরে চুতেছিলাম বারিপদা হয়ে বাংরিপসি।সেই ঘাট রোড মন্দির সব যেন বইয়ের সাথে মিলে যাচ্ছিল।ভালো লাগলো আবারও নতুন করে নতুন কিছু পাবো।
এটা মনে হয় আমাদের জন্য সুবিচার হলো না। পড়তে পড়তে একটা ঘোরের মধ্যে চলে গিয়েছিলাম। অসাধারণ। তৃতীয় শনিবার মানে আগামী ১৮ তারিখ। অনেক গুলো ঘন্টার অপেক্ষা। মন মানতে চায়না। আমি অফিস কামাই করে ওনার উপন্যাস টানা পড়ে শেষ করতাম। প্রনাম নেবেন।
Khub Bhalo. Hriday diye anubhav kara jay.
Dhanyabad sulekhak ke.
ওনার বেশিরভাগ লেখাই অনবদ্য, পড়ে আপ্লুত হই।
তবে এভাবে অপেক্ষায় থাকতে গিয়ে ধৈর্য্যচ্যুতি ঘটে যায়, ফলে কাজ-কারবার ব্যাহত হয়। দয়া করে এতদিনের ব্যবধান কমানোর চেষ্টা করুন।
আচ্ছা এটা কোন সময়কে ধরা হয়েছে প্রেক্ষাপটে?
খুব ভাল লাগলো।নিজেকে খুসি রাখতে না পারাটা যে কত দুঃখের।তা সব বয়সের নারী-পুরুষ টের পায়।”তা ছাড়া সমাজ আছে না”।এটা ভেবেই কেউ এগতে পারে না।সুখপাঠ কে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
গত তিনদিন ধরে একাধিক বার লগ ইন করার চেষ্টা করছিলাম লেখা টা পড়ব বলে, আজ অবশেষে পড়তে পারলাম। ধন্যবাদ জানাই সুখপাঠ কে, দ্যা ওয়াল কেও।
আমি ইদানিং বুদ্ধদেব গুহ র লেখা সারস্বত’ নামক স্মৃতি কথাটাই পড়ছিলাম। ওটা পড়তে পড়তে এটাও আজ কোথাও এক হয়ে গেল। শুধু মনে হচ্ছে এটা সাম্প্রতিক লেখা নয়। এটা কি পুনঃ মুদ্রণ নাকি একদম ফ্রেশ ? সম্পাদক মশাই একটু জানান প্লিজ।
বুদ্ধদেব গুহর ধারাবাহিক ‘শেষবিকেলে সিমলিপালে’ লেখাটি নতুন। যেহেতু এটি স্মৃতিকথা ও আত্মকথার সংমিশ্রণ, তাতে হয়তো পুরনো কিছু প্রসঙ্গ এখানে আসছে। তবে শ্রীগুহ ধারাবাহিকভাবে লেখাটি লিখছেন এবং লেখাটি সম্পূর্ণ নতুন। ধন্যবাদ।
Jeno Lala da samney boshey golpo korchen, ki sabolil lekha as usual. Shall eagerly wait for next saturday.
শুধু এটুকুই বলার এই উত্তর চল্লিশে আমার লেখক, আমার প্রিয় এক লহমায় কিশোরী বেলায় পৌঁছে দিলেন।…….. ❤️
Darun..Sei lekha r saili..sei Rajokio mejaj..
অন্য রকমের আত্মকথন মূলক লেখা পড়লাম।বুদ্ধদেব গুহর লেখা পড়ার সুযোগ খুব একটা হয়ে ওঠেনি ।ভাল লাগল।
খুবই ভালো লাগল, বিশেষত কুমারপ্রসাদের গল্পটি।পরের সংখ্যার আশায় থাকলাম।
গৃহবন্দী জীবনে নতুন প্রাপ্তি।
আজ প্রথমবার বুদ্ধদেব বাবুর লেখা পড়লাম।আপশোষ হচ্ছে কেন আগে পড়িনি। অবশ্যই ভবিষ্যতে ওনার লেখা পড়ব।
আমার অত্যন্ত প্রিয় লেখক বুদ্ধদেব গুহ। ওনা কে আমার আন্তরিক শ্রদ্ধা জানাই। তার লেখায় অরণ্য প্রীতি, মানব প্রেম অনবদ্য। বুদ্ধদেব বাবুর শারিরীক সুস্থতা কামনা করি।
আমার অত্যন্ত প্রিয় iconic লেখকের ধারাবাহিক। বহুদিন পর ‘সুখপাঠ্য’র পাতায় প্রথম পাঠে। ধন্যবাদ ‘সুখপাঠ’ ।
আপনার লেখার হার্বাল পরশটি বর্তমানের ক্লান্ত ফুসফুসটিকে চাঙ্গা করলো । শরীর পেরিয়ে এসে মনে প্রবেশ করার বয়সের মাধুর্য্য অপরিসীম । মনে হয় যেন অন্তবিহীন পথ পেরিয়ে সুধা শ্যামলিম পারে আসা । অপেক্ষায় রইলাম ।
আমার প্রিয় রিযুদা,
প্রথমেই আপনি আমার প্রণাম নেবেন, আপনি আমাকে জঙ্গল কে বুঝতে, ভালোবাসতে শিখিয়েছেন। জঙ্গলের নির্জনতা, জঙ্গলের শান্ত ভাব, তার স্পর্শ, তার ঘ্রাণ অনুভব করতে শিখিয়েছেন। শুধু জঙ্গল কেনো, আমাদের দেশে বিভিন্ন রাজ্যের মানুষ ও তার পরিবেশ কে বুঝতে শিখিয়েছেন। বিভিন্ন প্রদেশের মানুষের সামাজিকতা, তাদের সভ্যতা সমন্ধে জানতে শিখিয়েছেন। আপনার লেখা পড়লে নিজেকে আমি রিজুদার সাথেই আছি বলে মনে মনে ভাবতে পারি। আপনার আরো লেখা পড়ার অপেক্ষায় থাকলাম। আপনি সুস্থ ও ভালো থাকুন।
বুদ্ধদেব বাবু আমার প্রিয় লেখকদের মধ্যে একজন। উনার লেখা পড়ে কত জায়গা মনেমনে ঘুরেছি।উনার লেখায় প্রধান চরিত্র হচ্ছে সেই জায়গা। কত বন জঙ্গলের নাম জেনেছি উনার লেখার মাধ্যমে। উনি সুস্হ থাকুন আর ভাল ভাল গল্প লিখুন।
প্রিয় লেখকের প্রত্যেক টা কথার মধ্যে মনটাও হারিয়ে যায়………এক্ষেত্রে ও তাই ঘটছে…….
খুব ভালো লাগলো। বুদ্ধদেব বাবু আমার খুব প্রিয় লেখক। মন খারাপের দিনেও ওনার লেখা মন ভালো করে দিতে বেশি সময় নেয় না।
Khub valo lekha.mon bhalo hoye galo.apni sustho thakun,sundor thakun…
আমার প্রিয় লেখক । অরণ্য ও প্রেম কে অন্য মাত্রা দিয়েছেন বেশিরভাগ লেখায় । লেখা গুলো পড়ে ঘোর কাটতে সময় লাগে । ছায়ারা দীর্ঘ হোলেও উনি সুস্থ শরীরে দীর্ঘ দিন মনের পাঠে সুখ দিতে থাকুন এই চাই !
প্রিয় লেখকের কলমে অসামান্য একটি ভ্রমণকাহিনী পড়ছি
ভাল লেখা।শুভেচ্ছা ।
আমার প্রণাম জানাই। আপনার লেখা পড়তে ভালবাসি । সুস্থ থাকুন।
বুদ্ধদেববাবুর লেখার তুলনা পাওয়া কঠিন। বিভুতি বাবুর লেখার সাথে উনার অরন্য সম্বন্ধে লেখার তুলনা করা যায়।
মুগ্ধতা…
অসাধারণ। বুদ্ধদেব গুহ আমার অত্যন্ত পছন্দের লেখক। সুখপাঠে বুদ্ধদেব গুহ নাম দেখেই সাবস্ক্রাইব করলাম। পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
ছবির মতো লাগছে । অসাধারণ বর্ণনা। শুভেচ্ছা রইল…