আশ্বিন
পান-খাওয়া রসস্থ আশ্বিন নেই আর
কোথায় তার পাখি-পাখি চাল?
ফুলকান্ত ডাল?
এখন তাকাও তার অবেলায়—
সে ফুরিয়ে যাওয়ার মুখে খুঁড়িয়ে হাঁটে
চোখে শুকনো কাশের চশমা
মুখ খুললে ভুলভাল শালিক উড়ে যায়।
তবু তরুণী বৃষ্টি নেমে দাঁড়ায় বুড়ো আশ্বিনের শিয়রে
বারণ সত্ত্বেও ভিজিয়ে দেয়—
বেনেবউ করঞ্জের জানলা থেকে মুখ বাড়িয়ে বলে,
বুড়ো বয়সে আদিখ্যেতা দেখে গা হলুদ হয়ে যায়
দাঁড়কাক অস্তরাগে উড়ে যাওয়ার আগে বলে,
রাত্রি আসার আগে শেষবার হুটোপাটি মেখে নিচ্ছে…
ভোরের তালা খুলে কুয়াশাচরণ কার্তিকবাবু এসে দেখেন
আশ্বিন নেই, বৃষ্টিও নেই
শুধু মাঠের ধানকে তারা আদরে সবুজ করে গেছে
সেখান থেকে জন্মাচ্ছে রাশি রাশি সাদা বক…
হেমন্ত
হেমন্ত যতটুকু বলেছে, তার চেয়ে বেশি ছড়িয়েছে
মাঠে, নবীন কুয়াশার ভেতর— নীরব সংকেত;
অষ্টাদশী কামিনীর জন্য— বোঝেনি সে কি কিছুই?
এই এত ঘিরে থাকা, এই সুপুরির ফাঁক থেকে দেখা—
সব কি উড়ন্ত খড়কুটোয় লিখে দিতে হবে?
কত হাঁস উড়ে গেলে বোঝা যাবে সন্ধ্যা নেমেছে?
পুকুরের ধারে পড়ে থাকে মৃদু শঙ্খধ্বনি, ঘণ্টার শব্দ
ডানা খুলে নিমপেঁচা ভেসে যায় শুকতারার দুধে
কামিনী নিজের যৌবনে ডুবে আছে, হুঁশ নেই তার
এত কুয়াশা সে বোঝে না, বোঝে না এত নিরুত্তাপ শিশির
হেমন্ত বয়সে ঢের বড় তার চেয়ে— কাকার বন্ধু
কামিনীর শরীরে অম্লমধুর ঘ্রাণ ভাসে;
আষাঢ়ের মতো তরুণ কাউকে বুকের ভেতর পেলে
সর্বসমক্ষে ভিজে নেওয়া যায়
নিজের দুহিতার কাণ্ড দেখে শরতের গোধূলি ম্লান হয়;
তবু, হেমন্ত ধানের চশমা মুছে অপেক্ষা করে
সে জানে— একবার শীতের ঠান্ডা চোখ পড়লে কামিনী নষ্ট হয়ে যাবে
Comments are closed.