মে ২০২১

দু’পাশে খেতখামার, বিরল গাছপালা, ছোট ছোট কুঁড়েঘর, উট চরছে কোথাও, কোথাও বা মোষ। কোথাও আবার লম্বকর্ণ পাঁঠা, লাল-হলুদ শাড়ি পরা মেয়েরা, খেতের পাশে বেড়া, গ্রামের মধ্যে মধ্যে উঁচু উঁচু খুঁটির ওপরে লালরঙা পতাকা উড়ছে।

সেলিম একদিন স্কুল থেকে এসে বলল, জানিস ঝিনুক, আজ আমি ধানকাটা মেশিন দেখে এলাম। জৈথালির মাঠে মেশিন নেমেছে। কত উঁচু রে! রাস্তা দিয়ে যারাই যাচ্ছিল, দাঁড়িয়ে দেখছিল। বড় বড় জমিগুলো নিমেষেই শেষ করে দিচ্ছে।

পাঁচ বছরের ইউনিভার্সিটি জীবনের এই একটি ঘটনা সে ভুলে যেতে চেয়েছে। সবুজ স্নিগ্ধতায় মোড়া শান্ত ইউনিভার্সিটির গায়ে কলঙ্কের দাগ লেগেছিল, আগুন জ্বলেছিল চারদিকে। অশান্তির সেই আগুনে কত সম্পর্ক পুড়ে ছাই হয়ে গেল হঠাৎ করে।

গাড়োয়াল হিমালয়ের এই জঙ্গলের ওপর মানুষের লোলুপ দৃষ্টি সাম্প্রতিক নয়। উপর্যুপরি অত্যাচারে গত কয়েক দশকে সংকুচিত হয়েছে এই পাহাড়ের জঙ্গল। উত্তরাখণ্ডের মানুষজন একবাক্যে বলছেন, আজ হিমালয় পর্বতের সবচেয়ে বড় বিপদ ‘চৌড়ি সড়ক’।

একদিন আমরা খবর পেলাম, সীতাগড়া পাহাড়ে একটি মস্ত বড় বাঘ এসে আস্তানা গেড়েছে এবং সেখানে যে পিঁজরাপোল আছে পাহাড়ের ওপরে সেই পিঁজরাপোলে গোরু যথেচ্ছ মারছে। কিছুদিন আগে দু-তিনটে মানুষকেও ধরেছে।

আমবাগানের মেঠোপথ ধরে ইউনিভার্সিটির রাস্তায় এল তারা দু’জন। হাত ধরাধরি করে ফিরল। হস্টেলে পৌঁছতেই পিনাকী টিপ্পনী কাটল, ওরে শালা, নদে গৌর-নিতাই এল দেখছি!

লিরিক কবিতার পরিসরে বিনয় মজুমদারকে উপযুক্ত পুনর্বাসন দেওয়া যাবে না। তিনি কবির জন্য কোনও নির্জন উপত্যকা খোঁজেননি। কিন্তু কাব্যে চরণকে সবসময়ই ভেবে এসেছেন সমাজ ও কবির মধ্যেকার যোগসূত্র।

শুনেছি উত্তরাখণ্ডের পাহাড়ে বিরামহীন গতিতে চলছে নগরায়ন। আসলে তথাকথিত ‘উন্নয়ন’-এর মানদণ্ডকে উঁচু, আরও উঁচুতে নিয়ে যেতে পাহাড় তথা প্রকৃতিকে ধ্বংস করছে মানুষ আর মানুষের সরকার।

রাতের অন্ধকার। সামনে মাথায় টিনের ট্রাঙ্ক নিয়ে দ্রুত অথচ সন্তর্পণে এগিয়ে চলেছে বাবা। পিছনে বোনের হাত ধরে মা। কাঁচা মাটির রাস্তা। বর্ষার জলে পিচ্ছিল। বার বার পিছলে পড়ছে বোন। সবার পিছনে একটা বড় বোঁচকা মাথায় নিয়ে এক তরুণ।

জয়দীপ জানলার বাইরে সোনারঙের আকাশ, জলা আর কচুরিপানার বেগুনি ফুল দেখতে দেখতে ভাবছিল, এই লাইনের সমস্ত স্টেশনের নাম একটা সময় পরপর বলে দিতে পারত।