পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক, যাঁরা জন্মেছেন এবং জীবন কাটিয়েছেন লাতিন আমেরিকা, আরব দেশ, জাপান, জার্মানিতে, তাঁরা শাসকের হাতে মানবাধিকারের উন্মূলন দেখেছেন, দেখেছেন যুদ্ধ, ধ্বংস, আমেরিকার ঔপনিবেশিক আগ্রাসন। এ সবই ঘটেছে বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধ জুড়ে।
অনিতা অগ্নিহোত্রী
অব্যবহিত বাস্তবের ক্লেদ যখন মনকে বিপর্যস্ত, হতাশ করে তোলে তখন আমরা ফিরে যেতে চাই মনীষার প্রবহমানতার কাছে, অবলম্বন করতে চাই সেইসব মানুষের কথা যাঁরা জীবনকে দেখেছেন, আহত, রক্তাক্ত চিত্ত নিয়েও বিশ্বমানবিকতার সূত্রগুলিকে তুলে ধরেছেন বারবার। এই প্রত্যাবর্তন শাশ্বতের কাছে, পশ্চাদপসরণ নয়। বরং, নিজের মধ্যে অবগাহনে পুনর্জন্ম লাভ। এমন একটি বই কিছুদিন ধরে পড়ছি নানাভাবে। ১৯০৯ থেকে ২০২০ পর্যন্ত দীর্ঘ সময়পর্বে কুড়িটি বক্তৃতা নির্বাচন করে তাদের একটি সম্পাদনা সূত্রে গাঁথা সহজ কাজ ছিল না। এর পিছনে কাজ করেছে কবি অগ্নি রায়ের সহজাত আশাবাদী চেতনা। আর অবশ্যই বাংলা ভাষা ও বিশ্ব সাহিত্যের প্রতি তাঁর দায়বদ্ধতা।
কেবল নোবেল বলেই যে বক্তৃতাগুলির গুরুত্ব অসীম তা নয়। বিদগ্ধ, দীপ্ত ভূমিকাটিতে শিবাজী বন্দ্যোপাধ্যায় বিশ্লেষণ করেছেন জনমানসে নোবেলের তাৎপর্য— এবং নোবেলের পিছনে কূটনীতি, রাজনীতির ডানার ঝাপট। নোবেল ‘বিরল সম্মান’— বলেছেন, ফরাসি সাহিত্যের উজ্জ্বল নক্ষত্র অঁদ্রে জিদ। টি এস এলিয়ট একে আখ্যা দিয়েছেন— ‘সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক সম্মান’। জন স্টেনবেক জানিয়েছিলেন, নোবেল পুরস্কারের ‘মঞ্চগরিমা’ সম্বন্ধে তিনি ওয়াকিবহাল। তবু নোবেলকে কেন্দ্র করে থাকে রাজনৈতিক ঊর্ণাজাল। নোবেল তালিকা বহির্ভূত গুণীজনের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। এতৎসত্ত্বেও বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রতিভা হিসেবে অভিনন্দিত মানুষটি যখন মঞ্চে বলতে ওঠেন, তাঁর কথায় নিজের জীবনের গভীর উপলব্ধিগুলি ধ্বনিত হবেই। সেখানেই এই বক্তৃতামালার মূল্য। বইটি বাঙালি পাঠকের জন্য এই সময়ে এক বিরল উপহার।