ইকোক্রিটিকরা মনে করেন প্রকৃতির একটা বাস্তব অস্তিত্ব রয়েছে। এটি কবি-সাহিত্যিকদের কল্পনার জগতের কোনও বিষয়বস্তু কিংবা বাক্নির্ভর কোনও রোমান্টিক ধারণা নয়।
সুশান্ত মণ্ডল
মহামারী আরও একবার আমাদের বুঝিয়ে দিল, পরিবেশের ক্ষতি মানে মানুষের অস্তিত্বের সংকট। তাই আজ পরিবেশ সচেতনতা নিয়ে একটু বেশি ভাবনাচিন্তার কথা শোনা যাচ্ছে। কিন্তু পরিবেশ নিয়ে ভাবনা কেবল একালে নয়, প্রাচীনকালেও যে এই সচেতনতা ছিল তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ ভারতীয় প্রাচীন সাহিত্যে পাওয়া যায়। বেদ, পুরাণ, উপনিষদ, মহাকাব্যে পরিবেশ ভাবনা নিয়ে বহু চিন্তাভাবনা উপস্থাপিত হয়েছে।
একুশ শতকে এসে সাহিত্যিকদের কলমেও পরিবেশ ভাবনা বেশি করে দেখা যাচ্ছে। বিশ্বায়ন এবং বিশ্ব-উষ্ণায়নের কবলে পড়ে আমাদের সুজলা সুফলা বঙ্গদেশ তার মাতৃরূপকে হারাতে বসেছে। আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে খরা, বন্যা, ঝড়ের প্রাদুর্ভাব দেখা দিচ্ছে। বহু প্রাণী বিলুপ্তি হয়ে গেছে আর বহু বিলুপ্তিকরণের দিকে যাচ্ছে। পরিবেশ ও সেই সংক্রান্ত বিষয়-ভাবনা যেভাবে সাহিত্যিকদের লেখায় এসেছে ও আসছে সেই ক্ষেত্রটিকে ধরেই সাহিত্য সমালোচনার ধারায় ‘ইকোক্রিটিসিজম’ (ecocriticism) বিষয়টিও উঠে এসেছে। এর প্রতিপাদ্য বিষয় হল সাহিত্য ও ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য প্রকৃতির মধ্যে যে সম্পর্ক তা বিশ্লেষণাত্মকভাবে উপস্থাপন করা। আমার এই প্রবন্ধ তারই সন্ধান করবে।
পরিবেশ বলতে শুধু গাছপালা, বন-জঙ্গল বোঝায় না। গাছ, লতাপাতা, নদী, সমুদ্র, আকাশ-বাতাস, পাহাড়-পর্বত, কীটপতঙ্গ, পশুপাখি নিয়েই আমাদের এই পরিবেশ। এমনকি চাঁদের আলো, সূর্যের রশ্মি, রাতের খোলা আকাশের দৃশ্যমান নক্ষত্রপুঞ্জও পরিবেশ ও প্রকৃতির অঙ্গ। এদের যেকোনও কারও বিনাশ প্রকৃতির হানি, পরিবেশের ক্ষতি। ডারউইনের বিবর্তনবাদী চিন্তায় পরিবেশের প্রত্যেকটি উপাদানের সঙ্গে অন্য সব উপাদানের আন্তঃসম্পর্ককে স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে। এই সম্পর্ক মানুষ ও প্রকৃতি নিয়ে ভাবনায় নতুন ধারার জন্ম দিয়েছে। এই বোধ আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, পারস্পরিক কর্তব্যবোধ, দায়িত্ববোধ শুধু মানুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে পরিবেশ-প্রকৃতি পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।