তার শাশুড়ি নকশিকাঁথা বুনত। ফোঁড় তুলে তুলে আঁকত মাছ, পাখি। সেই সুতো কোথা থেকে আসত জানো? তাঁতের শাড়ির পাড় থেকে তোলা হত সেই সুতো। চম্পাকলি তার শাশুড়ি-মা বিমলার কাঁধের কাছে মুখ নিয়ে বসে বসে তা শিখত। একদিন কী করি, কী করি ভাবতে ভাবতে চম্পা একটা শাড়ি টেনে নিয়ে বসল ফোঁড় তুলতে। ওমা! এ যে নেশার মতো।
অনিন্দিতা গোস্বামী
চম্পাকলির হয়েছে মরণদশা। সে কী করবে ভেবে পাচ্ছে না। পরে সে একটা উপায় বার করবে। সেটা আমরা পরে জানতে পারব। আপাতত প্রথম অধ্যায় পড়া যাক।
চম্পাকলির চিকন গা, দোহারা চেহারা। দেখতে সে আহামরি কিছু নয় কিন্তু ওই যে কী একটা যেন চোখে লেগে থাকে। তা এখন গাঁ-গঞ্জে অমন ঠমক-ঠামক কার বা নেই। তা নিয়ে চম্পাকলি অত মাথা ঘামায় না। বহিরঙ্গে সে কী রূপ ধরে তা তো মানুষ নিজে জানে না। আয়না একটা ছলনা মাত্র।
সে নিজের মনে থাকে। আনমনা। চুপচাপ। ঘুরে ঘুরে উঠোন নিকোয়, গাই-গোরুর বিচালি কাটে, খোল দিয়ে মেখে জাবনা ভরে দেয়। তার গাইয়ের নাম মধু আর বকনা বাছুরের নাম টিকলি। তাদের গলকম্বলে আঙুল দিয়ে বিলি কেটে দেয় খানিক। তার পরেও যেন দিনের কতটা সময়। রান্না বলতে তো ওই ডাল, ভাত আর একটা তরকারি বা কোনওদিন আলুসেদ্ধ, সঙ্গে একটা মাছভাজা। এখন তো ঘরে গ্যাস। একটা নয়, ডবল সিলিন্ডার।