নিতাইয়ের বাবার লুঙ্গি থাইয়ের ওপর উঠে যায়, এককালের খাটিয়ে জনার্দন মৃধার শরীরে রাঙের সুগঠন চোখ এড়ায় না মলুয়ার। খোঁচা দাড়ি, মলিন মুখ আর হাঘরে দৃষ্টিতে কী যেন খুঁজেই চলে। হাত বাড়ায় শূন্যে।
সৌমী আচার্য্য
“নেতাইয়ের মা, বড্ড জারে জরাইসে গো, ক্যাঁথাখান দাও। সকাল থেকে এই যে জল, তা নেতাই গ্যালো কনে? আচ্ছা, ধলি ডাকে না ক্যান আজকাল? কী হইসে ওর? বিপুলের মা কাল বিকেলে আইসিল। তুমি বাড়িত ছিলা না ক্যান? কই গিসিলা? কতার উত্তর দাও না ক্যান? বড্ড গুমর বাড়সে না?”
কচি বয়সের এক নারী সংকোচে একখানা জীর্ণ কাঁথা নিতাইয়ের বাবার পায়ের ওপর ছড়াতেই স্প্রিংয়ের মতো উঠে হাত বাড়িয়ে ধরে ফেলে মাটিতে চেপে ধরে।
“চোকে দেখতে পাস তাই এত গুমর তোর, হ্যাঁ। যত দিন যায়, তোর গতর কচি হয় কী করি? হুম? রাতে কাচে আসিস না ক্যা? ঘেন্না করে, ঘেন্না? অন্দকে ঘেন্না?”
শরীরের এদিক-ওদিক হাত ঘুরতে থাকে। অনেক কসরত করে হাত থেকে ছিটকে বেরিয়ে মেঝেতে বসে খানিক হাঁপায়। তার পর নিচু হয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে উঠোনে আসে জংলাছাপা জীর্ণ শাড়ি।
আকাশ জুড়ে মেঘের আসর বসেছে। নিতাইদের বাড়ি জেলেপাড়ার একেবারে শেষে। ওদের বাড়ির পর আউশডাঙার মাঠ শুরু হয়েছে। বড় খোঁপার লাউডগা মাটির দাওয়ায় বসে পড়ে। শক্তপোক্ত হাতের দাবড়ানি শরীরে এঁটুলির মতো লেগে আছে। এখন অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। প্রথম প্রথম চোখে জল আসত। নিতাই বাড়া ভাতে জল ঢেলে চুলের ঝুঁটি ধরে নাড়িয়ে দিত।