পুজো ও উৎসবের মধ্যে নিরন্তর একটি ব্যবধান রয়েই যায়। পুজো নিভৃতের আরাধনা হতে পারে। পুজোকে ঘিরে উৎসব নির্মিত হলে সেখানে নিভৃতি যায় ঘুচে। তবু উৎসব আসে। সেখানে সাধারণ জনের যুক্ত হয়ে ওঠা কোলাহল ও আনন্দের জন্ম দেয়। তেমনটি কাম্যও থাকে।
বাংলা রচনা বইয়ে বহুকাল ধরে এ কথা লিখিত রয়েছে যে বাঙালির সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গা পূজা। কালে কালে তা স্বীকৃত ও বহুব্যাপ্তও বটে। এই উৎসবের আগমন চিহ্নিত হতে থাকে নদীর চরে কাশফুলের ছবি কিংবা কুমোরটুলিতে দুর্গা প্রতিমা তৈরির ছবি দিয়ে। এমন না হলে বাঙালির মন খালি খালি লাগে নীল আকাশে মেঘ দেখেও। আমরা একটি ঋতুকে উৎসবের সঙ্গে মিশিয়ে নিয়েছি। তার নামকরণ করেছি শারদোৎসব। এই শব্দবন্ধটিরও এক বৃহত্তর ব্যাখ্যাও আমরাই তৈরি করেছি। দেবীমহিমা থেকে যা প্রাকৃতজন পর্যন্ত পৌঁছে যায়। তারই এক প্রসারণ বলা যেতে পারে শারদ সংখ্যার প্রকাশ।
দুর্গা পুজোর সময়, শরৎকালে, শারদ সংখ্যা বা পুজো সংখ্যার প্রকাশের ইতিহাস অন্তত দেড়শো বছরের। কেশবচন্দ্র সেনের সাপ্তাহিক সংবাদপত্র ‘সুলভ সমাচার ‘ ইংরেজি আঠেরোশো বাহাত্তর সালে ‘ছুটির সুলভ ‘ নামে একটি শারদীয় সংখ্যা প্রকাশ করে। বাংলা বারোশো আশির আশ্বিন মাসে। একেই প্রথম পুজো সংখ্যা বলা হয়ে থাকে। তার পর আরও অনেক পত্রপত্রিকাই আশ্বিনে পুজো সংখ্যা বা শারদ সংখ্যা প্রকাশ শুরু করে। তার পর থেকেই শারদ সংখ্যা প্রকাশ ও তা নিয়ে বাঙালি পাঠকের আগ্রহ অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে একাল পর্যন্ত এসে পৌঁছেছে। বিপুল এক অসুখ এসে তার পথ বেশ কিছু সময় ধরে তাকে প্রতিহত করেছিল। তবে এবার উৎসব ও উৎসব সংখ্যা অর্গলমুক্ত। এই বছর এ পর্যন্ত বহু শারদ সংখ্যা প্রকাশিত। বাঙালি পাঠকের পড়ার অভাব নেই। একে যদি এক বিশেষ ঋতুতে সাহিত্যের ফসল বলা হয় তাহলে বলা যেতে পারে। অবশ্য ফসল কতখানি পুষ্ট সে বিষয়ে মতামত দেওয়া সহজ নয়। তবে তাকে অগ্রাহ্য করার উপায় নেই। বঙ্গদেশের শারদ উৎসবে তা এক সমারোহে অপরিহার্য।
ইদানীং মুদ্রিত মাধ্যমের সঙ্গে সঙ্গে ডিজিটাল মাধ্যমেও শারদ সংখ্যা প্রকাশিত হচ্ছে। পাঠকের অভ্যেসে তা খানিক রপ্তও হয়েছে বলা যেতে পারে। আসল কথা তো সাহিত্যের পাঠ। মাধ্যম সেখানে বাধা হয়ে দাঁড়াবে কেন। ‘সুখপাঠ ‘- এর শারদ সংখ্যাও প্রকাশিত হল সেই পরম্পরার সূত্রকে স্বীকার করে। এই নিয়ে তৃতীয় বছর। এ বছরও ‘সুখপাঠ ‘ তার প্রকাশিত লেখায় ব্যতিক্রমের চিহ্ন রাখতে চেয়েছে। সেখানে পাঠককে সঙ্গী হিসেবে পাওয়া যাবে বলে বিশ্বাস।
প্রকৃত অর্থে সাহিত্যের মূল্য চিত্তের আনন্দে, তার শুদ্ধতায়। সাহিত্য তো দ্বেষ -বিদ্বেষ, হানাহানির কথা বলে না। তার পারানির কড়ি যুক্তি ও আবেগ, এই দুই -ই। সে ভালবাসার কথা বলে। ধর্ম -বর্ণ-সম্প্রদায় নির্বিশেষে ভালবাসার কথা বলাই তার কাজ। রবীন্দ্রনাথের কবিতা মনে করলে বলা যাবে, ‘যারে বলে ভালবাসা তারে বলে পূজা। ‘ ‘সুখপাঠ ‘ তার শারদ সংখ্যায় সেই পূজার উপচার সাজিয়েছে যা পাঠক -মনের নিভৃতিতে পৌঁছতে চায় উৎসবের উঠোন পেরিয়ে।
Recover your password.
A password will be e-mailed to you.
তারে বলে পূজা
অরিন্দম বসুর জন্ম কলকাতায়। একসময় দল গড়ে নাটক, সেলসম্যানের চাকরি, নানা ব্যবসাও করেছেন। পেশাগত ক্ষেত্রে সংবাদপত্রে চিত্রশিল্পীর চাকরি দিয়ে শুরু। তারপর বারো বছরেরও বেশি সময় কলকাতার বিভিন্ন সংবাদপত্রে এবং অডিও-ভিসুয়াল মাধ্যমে সাংবাদিকতা। সম্পাদনা করেছেন মাসিক সাহিত্য পত্রিকা ‘পরশপাথর’। লেখালেখির শুরু চব্বিশ-পঁচিশ বছর বয়সে। এখনও পর্যন্ত প্রকাশিত আটটি উপন্যাস, দেড় শতাধিক গল্প ও একটি ভ্রমণকাহিনি। প্রকাশিত গ্রন্থ ষোলোটি। ছোটদের জন্যও গল্প লিখেছেন। অনুবাদ করেছেন অন্য ভারতীয় ভাষার গল্প। গল্পের জন্য পেয়েছেন ‘গল্পসরণি’ ও ‘গল্পমেলা’ পুরস্কার। উপন্যাসের জন্য পেয়েছেন ‘পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি’-র পুরস্কার, ‘নমিতা চট্টোপাধ্যায় সাহিত্য পুরস্কার, ‘বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ’-এর পুরস্কার। থাকেন কলকাতার দক্ষিণ প্রান্তে।
আগের লেখা
পরের লেখা